কলকাতা: যদি কাউকে বলা হয় ৩০ টন মাল সমেত চোদ্দো-চাকার ট্রাক চালাতে, তাহলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে বইকি! কিন্তু, পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই যোগিতা রঘুবংশীর কাছে এটা জলভাত!

তবে, এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, এই মহিলা আর পাঁচ-দশজন ট্রাক ড্রাইভারের মতো  স্কুলছুট কেউ। যোগিতার শিক্ষাগত যোগ্যতা শুনলে রীতিমতো চমতে উঠতে হবে। বাণিজ্য ও আইন নিয়ে স্নাতক এই মহিলা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি! সম্ভবত তিনিই দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত ট্রাকচালক।

কিন্তু, ভাগ্য কাকে কোন জায়গায় পৌঁছে দেয়, তা হয়ত কেউ বলতে পারে না। যেমনটা ঘটেছে যোগিতার ক্ষেত্রেও। আদতে উত্তরপ্রদেশের মেয়ে যোগিতা বড় হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। ১৯৯১ সালে ভোপালের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

বিয়ের আগে পাত্রপক্ষের তরফে বলা হয়েছিল যে ওই ব্যক্তি ভোপাল উচ্চ আদালতে ওকালতি করেন। কিন্তু, পরে জানা যায় যে, পুরোটাই ছিল ভাঁওতা। যোগিতার মাথার ওপর বাজ ভাঙে। ততদিনে মধ্যেই দু সন্তানের মা হয়ে গিয়েছেন তিনি।

সংসারে নিত্যদিন ঝামেলা লেগেই থাকত। কিন্তু, প্রায় ১৬ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান যোগিতার স্বামী। একা হাতে কী করে দুই সন্তানকে সামলাবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। এমন পরিস্থিতিতেই ল গ্র্যাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও ট্রাকচালক হয়ে যান যোগিতা।

কিন্তু, ওকালতি কেন করলেন না? যোগিতার ব্যাখ্যা, ওকালতি করতে হলে জুনিয়র হিসেবে কাজ শুরু করতে হত। তাতে দুই সন্তানের ভরণপোষণ ঠিকমতো হত না। তাই বাধ্য হয়েই এই পেশায় প্রবেশ। নিজের মুখেই জানালেন, সম্ভবত আমি দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত ট্রাকচালক।

তবে, নিজের পেশা নিয়ে এখন আর অসন্তুষ্ট নন তিনি। জানালেন, প্রথমদিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, কটাক্ষ, প্রলোভন, তির্যক মন্তব্য, তিক্ত অভিজ্ঞতা সহ্য করতে হয়েছে যোগিতাকে। কিন্তু, নিজের মননে অটল ছিলেন এই মহিলা। জানালেন, ২০০০ সাল থেকে টানা ট্রাক চালাচ্ছেন। ২০১৩ সালের মধ্যেই তিনি প্রায় পাঁচ লক্ষ কিলোমিটার চালিয়ে ফেলেন।

এই কীর্তি নিয়ে অবশ্য কোনও মাথাব্যথা নেই এই জননীর। বললেন, সামাজিক নিষেধাজ্ঞাকে ভুল প্রমাণ করতে তিনি এই পেশায় আসেননি। এসেছেন, কারণ পরিস্থিতি সেটাই দাবি করেছে। যোগিতার মতে, এটা মনে করার কোনও কারণ নেই আমি অন্য গ্রহের।

শেষে বলে রাখা দরকার, যোগিতার দুই সন্তান— যোশিকা এবং যশ্বিন আজ স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছে...