নয়াদিল্লি: আর কোনওদিন ফিরবে না মেয়েটা। সবাই মিলে বাড়িতে কয়েকটা দিন কাটানোর পরিকল্পনা করছিলেন বাবা সঞ্জীব জৈন। তারিষি কয়েকদিন পরেই ফিরে যাবে আমেরিকায় পড়াশোনার জন্য। তার আগে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। কিন্তু এক ঝটকায় সব শেষ। শনিবার রাতে যখন তারিষির ফোনটা এসেছিল, আতঙ্কের হিমেল স্রোত মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে এসেছিল সঞ্জীবের। পড়িপড়ি করে ছুটে এসেছিলেন ঢাকার গুলশন ক্যাফের সামনে। প্রবল উত্কন্ঠায় কেটেছিল সারা রাত।
দুই বন্ধু ফরাজ আয়াজ ও অবিনতা কবীরের সঙ্গে ক্যাফেতে গিয়েছিল ১৯ বছরের তারিষি। সেখান থেকেই তারিষি ফোন করেছিলেন বাবাকে। বলেছিলেন, ‘রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে। বলেছিলেন, আমার খুব ভয় করছে।জানি না বেঁচে ফিরতে পারব কিনা। ওরা সবাইকে মেরে ফেলছে’।
গুলশন ক্যাফের বাইরে চরম আতঙ্ক ও উত্কন্ঠায় পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে ছিলেন সঞ্জীব।
ভেতরে তখন বাঁচার মরীয়া চেষ্টায় বন্ধুদের সঙ্গে টয়লেটে ঢুকে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন তারিষি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। রবিবার সকাল ছয়টায় তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ফোনে কল রিসিভ হলেও কেউ কথা বলেনি।


ঢাকায় জঙ্গি হামলায় নিহত ২০ জন পণবন্দীর মধ্যে একজন ভারতীয় ছাত্রী তারিষি। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্রী বাংলাদেশের একটি ব্যাঙ্কে ইন্টার্নশিপ পেয়েছিলেন।
তারিষি ক্যাফের মধ্যে আটকে পড়েছে শুনে সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি উত্তরপ্রদেশে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও। সারা রাত টিভির পর্দায় নজর রাখছিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সঞ্জীবের সঙ্গে ফোনে নিরন্তর যোগাযোগ রাখেন তাঁরা। তারিষির কাকা রাকেশ জৈন এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্যাফের ভেতরে থেকে তারিষি ফোনে বলেছিল- ‘আমি বন্ধুদের সঙ্গে টয়লেটে লুকিয়ে রয়েছি। আমার মনে হচ্ছে ওরা আমাদের এক এক করে মেরে ফেলবে’।