মুম্বই: লকডাউনের মধ্যেই মুম্বইয়ের বান্দ্রায় উপচে পড়ল ভিড়। বান্দ্রা স্টেশনে প্রায় ৩০০০ পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়।
ঘরে ফিরতে চেয়ে স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়।খাবার নেই, ঘরে ফিরতে চেয়ে আর্জি জানাল জনতা। ভিড় হঠাতে লাঠিচার্জ পুলিশের।
পরিযায়ী শ্রমিকদের বক্তব্য, তাঁদের কাছে পেট ভরাবার মতো খাবার নেই। তাই তাঁদের গ্রামে পাঠানো হোক। বান্দ্রা পশ্চিম স্টেশনের কাছে জামা মসজিদের পাশে কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের প্রবাসী শ্রমিক। পরে স্থানীয় নেতা ও পুলিশের হস্তক্ষেপের পর তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়।
করোনা সংক্রমণের দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। প্রথমবার ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিন তার শেষদিন ছিল। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন ২ ঘোষণা করেছেন। আগামী ৩ মে পর্যন্ত চলবে লকডাউন।
এরইমধ্যে মহারাষ্ট্র তথা মুম্বইয়ে দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা। বান্দ্রাকে হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এতজন মানুষের ভিড় খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার। সারা দেশে মহারাষ্ট্রেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি-২৩৩৭। বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি)-র তথ্য অনুযায়ী, আজ মুম্বইতে নতুন করে ২০৪ সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। মুম্বইয়ে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তর সংখ্যা ১৭৫৩, মৃত ১১১।
এরইমধ্যে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে ট্যুইট করে বলেছেন, যে দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হল সেদিন রাজ্য আরও ২৪ ঘন্টা ট্রেন চালানোর আর্জি জানিয়েছিল, যাতে ভিন রাজ্যের শ্রমিকরা বাড়িতে ফিরে যেতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেও বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তুলেছিলেন এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রোডম্যাপ তৈরির আর্জি জানিয়েছিলেন।



অন্যদিকে, এনসিপি নেতা তথা মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রী নবাব মালিক বলেছেন, সরকার লোকজনদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সরকার আটকে পড়াদের খাবার দিচ্ছে। কিন্তু তাঁরা বাড়িতে ফেরার দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, তাঁদের সরকার দায়িত্ব এড়াচ্ছে না। লোকজনদের তাঁরা বোঝাবেন। মালিক আরও বলেছেন, মুম্বইয়ে ২০-৪০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে বিভ্রান্তিকর মেসেজ আসে। কিন্তু তাঁদের এখন কোথাও যেতে দেওয়া হবে না। এর আগেও এ ব্যাপারে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এভাবে ভিড় জমে যাওয়ায় মহারাষ্ট্র সরকার ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এত বড় সংখ্যায় লোকজনের জমায়েত আটকানো কেন গেল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। আরও প্রশ্ন উঠেছে, ওই সমস্ত লোকজন এভাবে ভিড় জমাতে বাধ্য হলেন কেন। সরকার ও প্রশাসন কি তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি? করোনা সংক্রমণ যেখানে বেশি ঘটেছে, সেই মুম্বইতে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল।
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ রাজ্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁর দাবি, সরকার ওই শ্রমিকদের খাবার বন্দোবস্ত করতে পারেনি। এজন্যই এই পরিস্থিতি।


অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যেভাবে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এটা তারই প্রতিফলন। মুম্বইয়ে আটকে থাকা শ্রমিকরা ভেবেছিলেন যে, লকডাউন শেষ হয়ে যাবে এবং তাঁদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁরা আজ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে হতাশ হয়েছেন এবং তাঁদের ক্ষোভ বান্দ্রার রাস্তায় আছড়ে পড়েছে।


এদিকে, সূত্রের খবর এই ভিড়ের ক্ষেত্রে রয়েছে গুজব। রেল স্টেশনের সামনে দুর্গতদের জন্য খাবার প্যাকেট ও খাদ্যসামগ্রী বন্টন করা হচ্ছে বলে গুজব ছড়ায়। সেই রটনায় হাওয়া দেয়, দূরপাল্লার ট্রেন চলার গুজব, যা আগুনের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে,এই ঘটনা নিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, বান্দ্রায় যা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। ১৪ এপ্রিল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে হয়ত ভেবেছিলেন ওই শ্রমিকরা। সেই কারণেই সম্ভবত এই ঘটনা ঘটেছে।
তিনি ওই শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, এখানে তাঁরা নিরাপদ। উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। যেদিন লকডাউন উঠবে, সেদিন শুধু মহারাষ্ট্র সরকারই নয়, কেন্দ্রও তাঁদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করবে।