নয়াদিল্লি ও কলকাতা: নারদ-মামলা এবার সুপ্রিম কোর্টে। কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে সোমবার সর্বোচ্চ আদালতে আলাদা আলাদা করে আবেদন জানাল রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সেই আবেদনে অজস্র ত্রুটি থাকার জন্যই সম্ভবত দ্রুত শুনানির আবেদন করতে পারেনি তারা।
হাইকোর্ট সিবিআইকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে প্রয়োজনে মামলা রুজু করে তদন্তের পথে এগোতে নির্দেশ দিয়েছে। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার। তাই দেরি না করে সোমবারই সর্বোচ্চ আদালতে কড়া নাড়ে রাজ্য সরকার।
তৃণমূলের তরফে একটি আবেদন করেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। আলাদা আলাদাভাবে করা আবেদনগুলির সার বক্তব্য একটাই। তা হল, কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক।
তবে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল এই মামলার দ্রুত শুনানির জন্য এদিন আবেদন জানায়নি। কিন্তু, কেন? আদালত সূত্রে দাবি, শুভেন্দু যে আবেদনটি করেছেন, তাতে প্রায় ৫০টি ভুল ছিল। যেমন, এফআইআরের ফরম্যাট উল্লেখ করা হয়নি। সার্টিফিকেটে আইনজীবীর স্বাক্ষর ছিল না। কোথাও কেস নম্বরের উল্লেখ ছিল না, আদালতের নামেরও উল্লেখ ছিল না।
রাজ্য সরকারের আবেদনেও এরকম কয়েকটি ত্রুটি ধরা পড়ে বলে সূত্রের খবর। আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, আবেদনে এই ত্রুটি থাকার জন্যই সম্ভবত সোমবার দ্রুত শুনানির আবেদন জানাতে পারেনি রাজ্য সরকার ও তৃণমূল।


এই ত্রুটিগুলি সংশোধন করে, মঙ্গলবার দ্রুত শুনানির আবেদন জানানো হতে পারে।
এদিকে, রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের আগেই এদিন সুপ্রিম কোর্টে একটি ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁর মামলার প্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
ক্যাভিয়েটের অর্থ, তাঁদের বক্তব্য না শুনে সুপ্রিম কোর্ট কোনও নির্দেশ দিতে পারবে না। মঙ্গলবার রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি হতে পারে।
এদিন সকালে কয়েকজন আইনজীবীকে নিয়ে দিল্লি যান কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। তিনি জানিয়েছেন, আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে যাতে কোনও খামতি না থাকে, সেজন্যই তাঁর দিল্লি যাত্রা।
এদিকে হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যখন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল, তখন রাস্তায় নেমে আন্দোলনে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, মানুষের টাকায় কেন সরকার যাবে সুপ্রিম কোর্টে। নারদা ফুটেজে যাঁদের সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
নারদকাণ্ডে তদন্তে গতি আনার দাবিতে সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে সোমবার বিক্ষোভ দেখায় বামেরা। সভামঞ্চ থেকে নারদকাণ্ড নিয়েও তৃণমূল-বিজেপি গড়াপেটার অভিযোগ তোলেন বিমান বসু, সূর্যকান্তরা।
যদিও তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ অস্বীকার করে, পাল্টা বামেদের আক্রমণ করে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ওরা তো অনেকদিন ধরেই আঁতাতের কথা বলে আসছে। মানুষই শুধু নয়, ওদের দলীয় কর্মীরাও তো বিশ্বাস করেনা। মানুষও জানে, তৃণমূলের যোগ্য বিকল্প বিজেপিই। ওরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এসব বলছে।
যদিও তৃণমূলের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের ঠিক মুখে এই স্টিং অপারেশন সামনে আনা হয়। এই প্রশ্নে বারবার বিজেপিকে নিশানা করেছেন তৃণমূলনেত্রী। হাইকোর্টের রায়ের দিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বলেন, বিজেপি অফিস থেকে পাবলিশ করা হয়েছে। প্লান্টেড, ষড়যন্ত্র করে করা হয়েছে। আইনি ও রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করা হবে বলেও জানান তিনি।