নয়াদিল্লি ও কলকাতা: দল বিরোধী কাজের অভিযোগে দীনেশ ত্রিবেদীকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূলের সংসদীয় বোর্ড। বৈঠকে উপস্থিত সাংসদদের অনেকেই নারদের স্টিং-বিদ্ধ!
এ এক আজব আদালত! যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁরাই বিচারকের আসনে! আর যিনি প্রতিবাদী, তিনিই কার্যত আসামী! মঙ্গলবার এমনই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হল বঙ্গ রাজনীতি, যখন দলবিরোধী কাজের অভিযোগে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ব্যারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে! সেই দীনেশ ত্রিবেদী যিনি কিনা নানা সময়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানাভাবে নারদ-কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। আর তাঁর বিচার করলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অনেককেই দেখা গিয়েছে নারদ নিউজের এই স্টিং ফুটেজে!
এদিন দিল্লিতে বৈঠকে বসে তৃণমূলের সংসদীয় বোর্ড। সূত্রের খবর, বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি দলের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে। বৈঠকের শুরুতে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দীনেশ ত্রিবেদীর কার্যকলাপ দলবিরোধী। তাঁর বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। প্রথমে তাঁকে সতর্ক করা হবে। তারপরও এমন মন্তব্য করলে, তাঁর বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রের খবর, বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেন মুকুল রায়ও। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় দীনেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। প্রসঙ্গত, এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুকুল রায়, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অপরূপা পোদ্দারও। যাঁদের অনেকেই নারদের স্টিং-বিদ্ধ। বিরোধীরা কটাক্ষের সুরে বলছে, যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তাঁরাই কি না দীনেশ ত্রিবেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বৈঠক করছেন!
যে দীনেশ ত্রিবেদীকে স্টিং অপারেশনের জন্য ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করলেও, তিনি দেখাই করেননি বলে জানিয়েছেন নারদ নিউজের ceo ম্যাথু স্যামুয়েল। দীনেশ ত্রিবেদী কখনও বণিকসভার অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমি যদি দলের সভাপতি হতাম, তাহলে বলতাম, আপনারা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণিত করার পরই আসুন। স্পষ্ট করে বলুন, ঠিক কী ঘটেছিল। যতদিন না নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছেন, ততদিন ঘরে বসে থাকুন।
কখনও দ্য টেলিগ্রাফ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, আমরা মাঝেমধ্যেই রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত উদ্ধৃতি টেনে বলি, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ সেথা শির।’ কিন্তু আজকের রাজনীতিতে মন ভয়ে ভরা, মাথা দুর্নীতির পাঁকে ডুবে। আর এহেন প্রতিবাদীই কি না শাস্তির কোপে! দীনেশ বলছেন,  আমাকে দলীয় বৈঠকে ডাকা হয়নি। দলের এমন কোনও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমি জানি না। ব্যারাকপুরের দলীয় সাংসদ সম্পর্কে তৃণমূলের এই অবস্থানের সমালোচনায় সরব বিরোধীরাও।
বিরোধীদের আরও বক্তব্য, ডেরেক ও’ব্রায়েনের বিরুদ্ধে তো প্রধানমন্ত্রীর ছবি জাল করার অভিযোগ উঠেছে, তা সত্বেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। তবে কি অভিযুক্তরাই তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের নয়নের মণি, আর প্রতিবাদ করলেই কোপে? প্রশ্ন বিরোধীদের।