নয়াদিল্লি: সু্প্রিম কোর্টে তিন তালাকের বিরোধিতা করল কেন্দ্র। মুসলিম সমাজে ‘বহুবিবাহ’, ‘নিকাহ হালাল’ নিয়েও শীর্ষ আদালতে আপত্তি জানিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় আইন ও ন্যায় মন্ত্রকের তরফে সর্বোচ্চ আদালতে হলফনামা দিয়ে আপত্তির কথা জানানো হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, লিঙ্গ সাম্যের মতো ইস্যুর ভিত্তিতে বহুবিবাহ প্রথা পুনর্বিচারের পক্ষে মত দিয়েছে মন্ত্রক। হলফনামায় বলা হয়েছে, ভারতে মুসলিমরা যে ‘বহুবিবাহ’, ‘নিকাহ হালাল’, ‘তিন তালাক’ প্রথা অনুসরণ করেন, তা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় বা আবশ্যিক ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্যেও পড়ে না।

কেন্দ্রের যুক্তি, ইসলাম রাষ্ট্র ঘোষিত ধর্ম হলেও সর্বত্র মুসলিম দেশগুলিতে ব্যাপক বদল, সংস্কার হয়েছে। এর অর্থ হল, আলোচ্য রীতি, প্রথাগুলিকে ইসলামিক রীতি-নীতির অপরিহার্য অংশ বলা চলে না।



হলফনামায় ইতিমধ্যেই ইসলামি দেশগুলিতে পার্সোনাল ল-তে ঘটে যাওয়া ব্যাপক পরিবর্তনের প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। ইরান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, টিউনিশিয়া, মরক্কো, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে বিবাহ আইনে বদলের কথা তুলে বলা হয়েছে, এটা উল্লেখ করার ব্যাপার যে, আইনের মতো ক্ষেত্রে ধর্মনির্ভর দেশগুলিতেও অনেক বদল ঘটে গিয়েছে। সুতরাং ভারতের মতো ঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশে মহিলাদের সংবিধানে সুরক্ষিত অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোনও কারণ থাকতে পারে না।

গত ৫ সেপ্টেম্বরের নির্দেশে শীর্ষ আদালত তিন তালাক, খোরপোশ, বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত দাম্পত্য বিষয়গুলিতে মুসলিম মহিলাদের অধিকারের ব্যাপারে কেন্দ্রকে তার বক্তব্য  জানাতে বলেছিল। তার জবাবেই এই অবস্থান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকটি।

ঘটনা হল, দেশের সংবিধানের ইতিহাসে, এই প্রথম কেন্দ্রের তরফে তিন তালাকের বিরোধিতা  করা হল আদালতে।  হলফনামায় বলা হয়েছে, মেয়েদের সামাজিক, আর্থিক বা মানসিক ভাবে বিপন্ন করে তোলে বা পুরুষের খেয়ালখুশির শিকার করে, এমন যে কোনও প্রথা বা রীতি সংবিধানের ১৪ ও ১৫ অনুচ্ছেদের (সমানাধিকার) সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিষয়টিকে জীবন ও ব্যক্তিগত অধিকারের সঙ্গে যুক্ত করে কেন্দ্রের ২৯ পৃষ্ঠার হলফনামায় স্পষ্ট বলা হয়েছে যে,  লিঙ্গ সমতা ও নারীর মর্যাদার বিষয়টির সঙ্গে কোনওরকম আপস চলতে পারে না।