নয়াদিল্লি: অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে ল কমিশনের জনমত যাচাইয়ের উদ্যোগে তীব্র ক্ষোভ জানাল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ড, আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন।


তিন তালাক প্রথার অবসান ঘটিয়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ঐচ্ছিক করা উচিত কিনা, এ ব্যাপারে গত ৭ সেপ্টেম্বর আমজনতার মতামত চায় কমিশন। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরাসরি সাধারণ মানুষের মত শোনার এমন উদ্যোগ সম্ভবত এই প্রথম। কিন্তু তাতে সরাসরি আপত্তি তুলেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ড। তারা কমিশনের প্রশ্নাবলীর মাধ্যমে জনতার মতামত সংগ্রহ প্রক্রিয়া বয়কট করছে বলে জানিয়েছে। সরকার তাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ তুলে মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ড ও বাকি সংগঠনগুলির  বক্তব্য, এ দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ থাকেন। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে সব মানুষকে ‘একই গোত্র, রং-এ’ ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হবে। এটা দেশের পক্ষে শুভ নয়, এতে নষ্ট হবে দেশের বৈচিত্র্য, বহুত্ববাদী চরিত্র।

মুসলিম সম্প্রদায়ের সব গোষ্ঠী (সেক্ট) ও মহিলারা এইসব ইস্যুতে একমত বলে জানান মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি রহমান, জামিয়াত-উলেমা-ই-হিন্দ সভাপতি মৌলানা আরশাদ মাদানি ও অন্যান্য সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা। আজ থেকে মুসলিমদের মধ্যে সচেতনতা ছড়াতে প্রচারে নামার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

তিন তালাক ইস্যুতে কেন্দ্রের অবস্থান খারিজ করে সংগঠনগুলির পাল্টা দাবি, অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশেষত হিন্দুদের সাপেক্ষে মুসলিম সমাজে ডিভোর্সের সংখ্যা কম। ২০১১-এর সেনসাস অনুসারে হিন্দুদের মধ্যে ডিভোর্সের সংখ্যা বেশি বলে দাবি করে তারা। জানিয়ে দেয়, তারা তিন তালাক প্রথা বাতিলের বিরুদ্ধে। মাদানি বলেন, ডিভোর্সের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হিন্দুদের মধ্যে, সংখ্যাটা মুসলিমদের দ্বিগুণ।   তবে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে ‘গলদ’ থাকার কথা স্বীকার করেছেন তাঁরা। দাবি করেছেন, প্রয়োজন মতো তা খতিয়েও দেখা হয়।

এদিকে গোটা বিতর্কে আসরে রাজনৈতিক দলগুলিও। কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এ দেশে কার্যকর করা যাবে না। কংগ্রেস, জেডি (ইউ)-র অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশ সহ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট সামনে। সেজন্যই মানুষে, মানুষে বিভেদ, বিভাজন ঘটানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলির মত, ভারতের মতো বহু সংস্কৃতির দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা কার্যত অসম্ভব। এটাকে হিন্দু বনাম মুসলিম ইস্যু বলে দেখানো উচিত নয়। এ দেশে ২০০-৩০০ রকমের পার্সনাল ল আছে।

তবে পাল্টা বিজেপির বক্তব্য, আইন কমিশন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মত শুনছে। তারপর সেগুলি খতিয়ে দেখে তারা সুপ্রিম কোর্টকে জানাবে। আন্তর্জাতিক স্তরে চালু নানা আইনের কথা বলেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, লিঙ্গ সমতা আনতে এই দেশগুলি আইন বদলেছে, প্রগতিশীল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে পা ফেলছে।