শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরে অতিরিক্ত আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন নিয়ে জল্পনা ওড়াল মোদি সরকার। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আধা-সামরিক বাহিনীর বদলি ও মোতায়েন করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া নিয়মমাফিক।
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে জল্পনার সূত্রপাত। কেন্দ্র জানায়, উপত্যকায় ১০০ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী (অর্থাৎ ১০ হাজার জওয়ান) মোতায়েন করা হয়েছে। ওই কোম্পানি নিজ নিজ রিপোর্টিং স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫০ কোম্পানি সিআরপিএফ, ৩০ কোম্পানি এসএসবি, ১০ কোম্পানি করে বিএসএফ ও আইটিবিপি।
এরপরই, সংবাদমাধ্যমের একাংশে খবর প্রচারিত হতে থাকে যে, মোট প্রায় ২৮০ কোম্পানি বাহিনী উপত্যকায় মোতায়েন করতে চলেছে মোদি সরকার। জল্পনা যে কেন্দ্র জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৫এ ধারাকে পাকাপাকিভাবে তুলে নিতে পারে। এই ধরার দৌলতে ওই রাজ্যে জমি ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অধিকার পেয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিশেষ করে, জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক মহলে এই আশঙ্কা ও জল্পনা বেশ কয়েকদিন ধরেই জোরাল হয়েছে। রাজ্যের দুই প্রধান দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) জানিয়ে দিয়েছে, ৩৫এ ধারা প্রত্যাহার করার মতো কোনও ভাবনা কেন্দ্র যদি পোষণ করে থাকে, তাহলে তারা রুখে দাঁড়াবে।
এমনিতেই, জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচন পিছিয়ে গিয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে জম্মু ও কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলার অবনতি রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান। একইসঙ্গে, বিধানসভা নির্বাচন যাতে চলতি বছরের শেষদিকে করা সম্ভব হয়, তার তদ্বিরও করেন। আর এসবের মধ্যেই, অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের জল্পনা এই আশঙ্কায় ঘৃতাহুতি দেয়।
কিন্তু, শুক্রবার সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, ৩৫এ বা ৩৭০ ধারাকে কোনওভাবে প্রত্যাহার করার চিন্তাভাবনা নেই সরকারের। সংবাদমাধ্যমের একাংশে ২৮০ কোম্পানি মোতায়েন নিয়েও যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
মন্ত্রকের এক আধিকারিক স্বীকার করেন, গত সপ্তাহে ১০০ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সূত্রের দাবি, নিয়মিত সময় অন্তর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বাহিনীর বদলি ও মোতায়েন করা হয়ে থাকে। কোনও জওয়ানকে দীর্ঘদিন পোস্টিং দেওয়া হয় না। কারণ, জওয়ানদের বিশ্রাম, বাড়তি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। সেই জন্য নিয়মমাফিক বদলি ও রোটেশন করা হয়।
যদিও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আরেক সূত্রের দাবি, আসন্ন স্বাধীনতা দিবসে উপত্যকার প্রত্যেক পঞ্চায়েতে তেরঙা উত্তোলনের প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্র। সেই কর্মসূচিকে নিরাপত্তা দিতেই বাহিনীর আনাগোনা শুরু হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। চলতি বছরের শেষ দিকে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাবনা। বিজেপি শীর্ষস্তরের ভাবনা, স্বাধীনতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দল একটা বাড়তি উদ্দীপনা পাবে।