উরি ও নয়াদিল্লি: উরির সেনাঘাঁটিতে হামলাকারী চার জঙ্গি মইয়ের সাহায্যে বৈদ্যুতিন কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।


সেনাবাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে যে, সালামবাদ নালার সংলগ্ন একটি অঞ্চলে ওই বেড়া টপকে ভারতে প্রবেশ করে জঙ্গিরা। সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে,  সেনা তদন্তে জানা গিয়েছে, চার জঙ্গির মধ্যে একজন প্রথমে কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকফোঁকর দিয়ে ভারতে ঢোকে। সে তারপর এদিকে একটি মই তৈরি করে।

ঠিক একইভাবে, ওপারে থাকা বাকি তিন জঙ্গি, নিজেদের দিকে আরেকটি মই তৈরি করে। এরপর দুদিকের মইকে জুড়ে একটি সেতু নির্মাণ করে জঙ্গিরা। এইভাবে, বাকিরা, ওই মইকে সেতুর মতো ব্যবহার করে এদেশে ঢোকে।

সূত্রের মতে, ওই চারজনের পক্ষে সম্ভব ছিল না একসঙ্গে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে গলে প্রবেশ করা। কারণ, প্রত্যেকের কাছেই বড় রুকস্যাক ছিল যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র, বারুদ, খাবার ছিল। সেগুলি নিয়ে পেরোতে গেলে অনেক সময় লাগত। উপরন্তু, সেনার প্যাট্রলিং টিমের নজরেও চলে আসত তারা। ফলে, সেখানেই বেঘোরে প্রাণ যেতে পারত জঙ্গিদের।

সেনা তদন্তে উঠে এসেছে, চার জঙ্গি এদিকে ঢোকার পর ওই মইটিকে তারা দুই গাইডের হাতে দিয়ে দেয়। ওই গাইডরাই মূলত, জঙ্গিদের পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা পর্যন্ত এনেছিল। জঙ্গিরা জানত, মই ফেলে রাখলে, সেনা সতর্ক হয়ে পড়বে। তাই নিজেদের ঢোকার চিহ্ন মোছার জন্য মইটি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সেনার সন্দেহ, ১৮ সেপ্টেম্বর হামলা চালানোর আগের রাতে জঙ্গিরা সম্ভবত গোহাল্লাম বা জবলা গ্রামে রাত কাটিয়েছিল। বাহিনী এখন সেখানে গিয়ে তদন্ত করছে। এই প্রথম নয়। এর আগে বছরের গোড়ার দিকে উত্তর কাশ্মীরের মাচিল সেক্টরে একইভাবে মই ব্যবহার করে এদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল জঙ্গিরা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর উরি-র সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় চার জয়েশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি। হামলায় শহিদ গন ১৯ জওয়ান। নষ্ট হয় প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্তেও শুরু করে সেনা। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে উরির ব্রিগেড কম্যান্ডার কে সোমা শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে যে, জঙ্গিরা অন্তত হামলার একদন আগে ঘাঁটিতে প্রবেশ করেছিল।

সেনার মতে, বর্তমানে জঙ্গিরা ‘শ্যালো ইনফিলট্রেশন’ করার চেষ্টা করে চলেছে। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রণরেখার সবথেকে কাছে যে সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, তাতেই আঘাত হানা। তদন্তে নেমে সেনা জানতে পেরেছে, জঙ্গিরা, ওই ঘাঁটির প্রাচীরে ছেদ করে ভেতরে ঢোকে। সবচেয়ে বড় কথা, ঘাঁটির মধ্যে কোথায় কী রয়েছে, তা তাদের নখদর্পণে ছিল।

এর থেকেই সেনার সন্দেহ, হামলার আগে জঙ্গিরা সম্ভবত নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে সুখদার গ্রামে রাত কাটায়। কারণ, এই গ্রাম এমন একটা জায়গায় অবস্থিত যে, সেখান থেকে উরি সেনা ঘাঁটি পুরে স্পষ্ট দেখা যায়। এমনকী, জওয়ানরা কোথায় যাচ্ছে, কোথায় পাহারা দচ্ছে এবং ঘাঁটির মধ্যে কোথা কী রয়েছে, সব দেখা যায়।