নয়াদিল্লি:  ছেলের সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের স্মৃতিচারণ করলেন কার্গিল যুদ্ধে বীর সৈনিক ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার বাবা। ছেলের কীর্তি তাঁদের পরম বীর চক্র প্রাপক গর্বিত বাবা-মায়ের মর্যাদা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিক্রমের বাবা।


ছেলেকে অভাব  প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেন তাঁরা। শহিদ জওয়ানের বাবা  জি এল বাত্রা বলেছেন, ছেলেকে হারানোর শোক খুবই যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু এমন সন্তান তো অনেক ভাগ্য করলেই পাওয়া যায়। আমরা ওর জন্য গর্বিত।

১৯৯৯-এ কার্গিল যুদ্ধে পাক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মাত্র ২৪ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন বিক্রম। তাঁর সাহসিকতাকে কুর্ণিশ জানিয়ে তাঁকে মরণোত্তর পরম বীর চক্র সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে।

জি এল বাত্রা বলেছেন, ওর শহিদ হওয়ার পর গত ২০ বছর ধরে সারা দেশ থেকে যে সম্মান পেয়েছি, তাতে অভিভূত।কোনওদিন কল্পনাও করতে পারিনি যে কোনও সন্তান তার বাবা-মাকে এতটা সম্মানের আসনে নিয়ে যেতে পারে।

কার্গিল যুদ্ধে অসামান্য কীর্তির জন্য ক্যাপ্টেন বিক্রম অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁকে টাইগার অফ ড্রাস, লাওন অফ কার্গিল, কার্গিল হিরো-র মতো নামে ডাকা হয়। তাঁর সাহসিকতা, অদম্য লড়াকু মানসিকতা ও দৃঢ়তা স্বদেশ রক্ষার জন্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ প্রত্যেকের কাছেই উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

১৯৯৯-এ ক্যাপ্টেন বিক্রম। নেমেছিলেন সবচেয়ে কঠিন অভিযানে। গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ পয়েন্ট ৪৮৭৫ শত্রুপক্ষের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ওই লড়াইয়ে উজ্জ্বল ভূমিকা নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন বিক্রম। ওপর থেকে শত্রুপক্ষের  অনবরত গুলি চালানোর মধ্যেও লক্ষ্যে থেকে বিচলিত হননি তিনি। অভিযানের সময় প্রবল জ্বরে ভুগছিলেন ক্যাপ্টেন বাত্রা।শরীর ভেঙে পড়েছিল।  কিন্তু রণভূমিতে অসুস্থতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তাঁর অভিযানে। যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই।

জিএল বাত্রা বলেছেন, বিক্রমের ও অন্যান্য সৈন্যরা দুঃসাহসী অভিযান শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে শুনেছি, পর্বত শৃঙ্গে ওঠার সময় হঠাত্ করেই বিক্রমের মুখাবয়ব বদলে যায়। ক্লান্তির চিহ্ন আর থাকেনি, উধাও হয়ে যায় জ্বর। লক্ষ্য পূরণ করাই হয়ে ওঠে তার ধ্যানজ্ঞান।

৭ জুলাই অভিযান তখন প্রায় শেষের দিকে। বিস্ফোরণে পায়ে আঘাত পান লেফটেনেন্ট নবীন। তাঁকে আড়ালে নিয়ে আসতে বাঙ্কার থেকে বের হন ক্যাপ্টেন বিক্রম। জিএল বাত্রা বলেছেন, বিক্রম নবীনকে আড়ালে নিয়ে আসছিল। তখনও গুরুতর জখম নবীন তাঁকে লড়াই চালিয়ে যেতে দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছিলেন। ওই সময়ই শত্রুপক্ষের একটা বুলেট বিদ্ধ হয় বিক্রমের বুকে।  ওই অবস্থাতেও নবীনের জীবন রক্ষা করে বিক্রম।

বিক্রমের মৃত্যুতে শোকে ক্ষুব্ধ ভারতীয় সেনার ১৩ জেএকে রাইফেলসের জওয়ানরা তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শুরু করেন। সেই আক্রমণ যোঝার ক্ষমতাই ছিল না পাক বাহিনীর। তারা পিঠটান দেয়। এরফলে ওই গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ ভারতের দখলে চলে আসে। ভারতীয় বাহিনী চলে আসে সুবিধাজনক অবস্থানে। ক্যাপ্টেন বাত্রার আত্মত্যাগ ভারতীয় বাহিনীর সাফল্যের সোপান তৈরি করে দেয়।

জি এল বাত্রা বলেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিক্রমকে তাঁর বন্ধুরা সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। উত্তরে ক্যাপ্টেন বিক্রম বলেছিলেন, হয় আমি ওই শৃঙ্গে ভারতের পতাকা তুলে ফিরব, নাহলে তিরঙায় ঢাকা অবস্থায় ফিরব।