রায়পুর: মারা গিয়েছে ‘গঙ্গারাম’। শোকে অধিকাংশ বাড়িতে উনুনও জ্বলেনি। চোখের জলে স্থানীয়রা বিদায় জানালেন তাঁদের গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন সঙ্গীকে। আসলে ‘গঙ্গারাম’ ছত্তিসগঢ়ের বেমেতাঢ়া জেলার বাওয়া মোহতারা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে  শুধু  তো কুমীর ছিল না, ছিল ভগবানের মতো। রক্ষাকর্তা হিসেবে ‘গঙ্গারামে’র পুজো করতেন তাঁরা।


তাই ১৩০ বছর বয়সে কুমীরটি মারা যাওয়ার পর তার শেষযাত্রায় সামিল হলেন শোকবিহ্বল গ্রামবাসীরা। গ্রামের একটি পুকুরে গত মঙ্গলবার ৩.৪ মিটার লম্বা কুমীরটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় । গ্রামবাসীরা বন দফতরকে খবর দেন এবং জল থেকে মৃত কুমীরটিকে তোলা হয়।

পুকুরের ধারেই কুমীরকে কবরস্থ করা হয়েছে। সেখানে একটি স্মৃতিস্মারক গড়ার কথাও জানিয়েছেন গ্রামের সরপঞ্চ মোহন সাহু।সেখানে একটি মন্দির গড়ার কথাও ভাবনায় রয়েছে তাঁদের।

সাহু জানিয়েছেন, কুমীরটির শেষযাত্রা ও শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৫০০ জন। সবাই মৃত কুমীরটিকে ছুঁয়ে শেষবারের মতো আশীর্বাদ চেয়ে নিয়েছেন।

সরপঞ্চ জানিয়েছেন, কুমীরটিকে সবাই এত ভালোবাসত যে, অনেক বাড়িতেই তার মৃত্যুর দিন রান্না চড়েনি। বহুদিন আগে স্থানীয়রাই কুমীরটির নাম দিয়েছিলেন ‘গঙ্গারাম’। ভগবান তথা রক্ষাকর্তা হিসেবে তাঁরা পুজোও করতেন কুমীরটির।

সাহু স্মতির সরণি বেয়ে জানিয়েছেন, গ্রামের প্রধান পুকুরে প্রায় ১০০ বছর ধরে ছিল কুমীরটি। তাঁর দাদুর শৈশবেও কুমীরটি গ্রামে ছিল। পুকুরে কুমীর থাকলেও শিশুরা সহ গ্রামের লোকজন নির্দ্বিধায় স্নান করতে নামত। কুমীরটি কারুর কোনওদিন কোনও ক্ষতি করেনি। অতীতে বেশ কয়েকবার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে চলে গিয়েছিল কুমীরটি। প্রতিবারই কুমীরটিকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছিল।

কুমীরটির প্রতি গ্রামবাসীদের ভালোবাসা দেখে আপ্লুত বেমতারার বনবিভাগের মহকুমা শাসক বলেছেন, এটা মানুষ ও পশুপ সহাবস্থানের একটা নিদর্শন।  তিনি জানিয়েছেন, কুমীরটির মারা যাওয়ার খবর পেয়ে গ্রামে যান বনবিভাগের কর্মীরা। পশুচিকিত্সকরা ময়নাতদন্তও করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, প্রায় ১৩০ বছরের কুমীরটির ওজন ২৫০ কেজি। স্বাভাবিক কারনেই মৃত্যু হয়েছে।