লখনউ: দশেরা উৎসব উপলক্ষে লখনউয়ের আয়েশবাগে ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানে আয়োজিত সভায় যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই সভা থেকেই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন মোদী।

ভাষণ দিতে উঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা প্রতি বছর রাবণ পোড়াই। এর থেকে এই শিক্ষা পাই যে, আমাদের অন্তরের এবং সমাজের রাবণকে শেষ করতে হবে। উত্তরপ্রদেশ থেকেই আমরা শ্রীরাম এবং শ্রীকৃষ্ণকে পেয়েছি। এখানে বিজয়া দশমী পালন করার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমাদের দেশের ঐতিহ্য অনন্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে ঐতিহ্য চলছে, তা ধরে রাখতে হবে।'

এই মঞ্চ থেকেই সন্ত্রাসবাদ এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধেও সরব হন মোদী। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ হল মানবিকতার শত্রু। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে এক সুরে কথা বলতে হবে। নাম না করে পাকিস্তান প্রসঙ্গে মোদী বলেন, যে দেশ সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়, সেই দেশের নিন্দা করতেই হবে। আমরা শান্তি চাই। ভারত শান্তির দেশ। তবে কখনও কখনও যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। আজ আন্তর্জাতিক শিশুকন্যা দিবস। লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে। একইসঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা, জাত-পাত, স্বজন-পোষণের মতো রাবণকেও খতম করতে হবে।

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বলতে গিয়ে এদিন রামায়নের কথা উল্লেখ করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘কে প্রথম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন? তিনি কী একজন যোদ্ধা ছিলেন? রামায়ন দেখেছে, জয়াটু প্রথম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি একজন মহিলার সম্মান রক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন। বর্তমানে রাবণ ভিন্ন রূপে দেখা দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদই নতুন রাবণ। এটা মানবতার শত্রু। তবে দেশের ১২৫ কোটি মানুষ যদি নজরদারি চালান, তাহলে সন্ত্রাসবাদীরা কোনওদিন সফল হবে না। আমরা কোনওদিন রাম হতে পারব না। তবে জটায়ু হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে আমাদের।’

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বকে এক হওয়ার ডাক দেন মোদী। তিনি বলেন, ‘১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণকে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা বলে দাবি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের পর তাদের ধারণা বদলে গিয়েছে। এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সন্ত্রাস দমনের কথা বলছে। সারা বিশ্বকে এক হতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদের শিকড় উপড়ে দিতে হবে।’

এতদিন দিল্লিতেই দশেরা উৎসব পালন করতেন প্রধানমন্ত্রীরা। এবার সেই প্রথা ভেঙে লখনউয়ে গেলেন মোদী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। এরপর আয়েশবাগে পৌঁছন মোদী। তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান দলীয় নেতা-কর্মীরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে লখনউবাসীর পক্ষ থেকে স্বাগত জানান। দলীয় নেতারা মোদীর হাতে তীর-ধনুক, সুদর্শন চক্র, গদা তুলে দেন।

উত্তরপ্রদেশে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মোদীর এই সভা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র স্থানীয় নেতার অভাব রয়েছে। সেই কারণে ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য মোদীর উপরেই নির্ভর করছে দল। মে মাস থেকে নিয়মিত উত্তরপ্রদেশ সফরে আসছেন মোদী। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, প্রধানমন্ত্রী তত বেশি উত্তরপ্রদেশ সফরে আসবেন।