নয়াদিল্লি: উরি হামলা এবং তার জবাব দিতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় বাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ভারত-পাক সম্পর্কের উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ওপরও চাপ বেড়েছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাই পরমাণু যুদ্ধে নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরমাণু-যুদ্ধ হলে শুধু ভারত-পাকিস্তানকেই নয়, সমগ্র বিশ্বকেই ভয়াবহ খেসারত দিতে হবে।
ভারত অবশ্য অনেকদিন আগেই প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের কোনও কোনও মহল থেকে মাঝেমধ্যেই পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দেওয়া হয়। সম্প্রতি পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ ধরনেই একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন।
বিশ্বের ইতিহাসে একবার মাত্র পরমাণু বোমার ব্যবহার হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫-এর ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পরমাণু আক্রমণ চালিয়েছিল আমেরিকা। দুটি শহরের প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই পরমাণু বোমার তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব জাপানের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বইতে হচ্ছে। পরমাণু অস্ত্রের ভয়ঙ্কর মারণ ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার প্রতীক হিরোশিমা ও নাগাসাকি।
ভারতের চেয়ে বেশি পরমাণু বোমা রয়েছে পাকিস্তানের কাছে। ভারতের রয়েছে ১১০-১২০ টি , আর পাকিস্তানের হাতে রয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টি।
মার্কিন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ান্স ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়র ওয়ার-এর রিপোর্ট অনুসারে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হলে অনন্ত দুই কোটি মানুষের মৃত্যু হবে।সেইসঙ্গে দেখা দেবে আর্থিক বিপর্যয়।
পরমাণু বোমার তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাবে মিলিয়ে যাবে বায়ুমন্ডলের অর্ধেক ওজোন স্তর। তৈরি হবে ‘পারমাণবিক শৈত্য’। মৌসুমী বায়ুর গতিপথে ওলট-পালট ঘটে যাবে। এর প্রভাব শুধু ভারত বা পাকিস্তানেই নয়, পড়বে সারা বিশ্বের কৃষি ক্ষেত্রেই। ফসল হবে না। দেখা দেবে চরম দুর্ভিক্ষ। সারা বিশ্বের প্রায় দুই কোটি মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে হবে।
পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপের জন্য পাকিস্তানের হাতে বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র রয়েছে। এই ক্ষেপনাস্ত্রগুলির মাধ্যমে পাকিস্তান দিল্লি, জয়পুর, আমদাবাদ,মুম্বই, পুনে, নাগপুর, ভোপাল, লখনউ,পটনা ও কলকাতার মতো শহরে পরমাণু বোমা হামলা চালাতে পারে পাকিস্তান। অন্যদিকে, ভারতের কাছে যে ক্ষেপনাস্ত্রগুলি রয়েছে তার পাল্লার মধ্যে পড়ছে সমগ্র পাকিস্তানই। এর থেকেই স্পষ্ট, পরমাণু যুদ্ধ হলে ভারতের চরম ক্ষতি হবে। কিন্তু পাকিস্তান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, পরমাণু বোমা হামলার বিরুদ্ধে ভারতের রক্ষাকবচও রয়েছে। ভারতের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম আঘাত হানার আগেই শত্রুপক্ষের মিসাইল ধ্বংস করতে সক্ষম। ভারতের কাছে এ ধরনের দুটি রক্ষা কবচ রয়েছে। প্রথমটির নাম পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, অন্যটি অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স। আমেরিকা, রাশিয়া ও ইজরায়েলের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের এই রক্ষাকবচ রয়েছে।
কিন্তু পরমাণু যুদ্ধ কখনই কাম্য নয়। প্রাথমিক প্রত্যক্ষ ক্ষতির পর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব মানবসভ্যতাকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।