মুম্বই: কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে আরএসএস বলল, গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই পটেলের বিশাল মূর্তি হতে পারলে কেন অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য সংসদে আইন পাশ করানো যায় না? দ্রুত মন্দির নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও আরও কয়েকটি সংগঠন আয়োজিত এক সমাবেশে সঙ্ঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবালে বলেছেন, অযোধ্যার জমির মালিকানা সংক্রান্ত মামলা শোনা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে। পৃথক বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে এ ব্যাপারে। কিন্তু এযাবত্ কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নর্মদার তীরে সর্দার পটেলের মূর্তি যদি বসতে পারে, তবে কেন রামমন্দির তৈরির জন্য কেন আইন পাশ হয় না? গত ৩১ অক্টোবর নর্মদার সর্দার সরোবর বাঁধের কাছে দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তির উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি বলে দাবি।
হোসাবালে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও বলেছিলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা চালিয়ে যদি অযোধ্যায় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়, তবে সেখানে মন্দিরের জন্য ওই জমি দেওয়া হবে। খননকার্য চালিয়ে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মিলেছে। কিন্তু এখন আদালত বলছে, মন্দিরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই।
গত অক্টোবরেই নাগপুরে বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রায় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত অযোধ্যায় মন্দির তৈরির পথ প্রশস্ত করতে আইন প্রবর্তনের দাবি করেন। হোসাবালে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই অযোধ্যা মামলার শুনানির জন্য আলাদা বেঞ্চ গড়েছে, তবুও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও।
শীর্ষ আদালত গত ২৯ অক্টোবর রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক মামলার শুনানি আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ধার্য করেছে। একটি যথোপযুক্ত বেঞ্চে শুনানি হবে, যার নির্ঘন্ট ঠিক করবে বেঞ্চ। বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন ২০১৪-য় ভোটে জিতে সরকার গঠনের আগে বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতিমতো রামমন্দির তৈরির দাবি করছে। গেরুয়া দলটি মন্দির নির্মাণে দায়বদ্ধ বলে জানালেও সেজন্য সংসদে অর্ডিন্যান্স আনার ব্যাপারে নীরব।
আবার এর মধ্যেই যোগগুরু রামদেব মন্দির নির্মাণের জন্য অর্ডিন্যান্স জারির পক্ষে সওয়াল করেছেন, গণতন্ত্রে সংসদ ন্যয়ের সবচেয়ে বড় মন্দির। মন্দির নির্মাণ সম্ভব করে তোলার জন্য মোদী সরকার সেখানে অর্ডিন্যান্স আনতেই পারে। তিনি এও বলেন, কোটি কোটি মানুষ যেখানে মন্দির দেখতে চাইছেন, সেখানে তা না হলে লোকে বিজেপির ওপর ভরসা হারাবে, যা তাদের পক্ষে শুভ হবে না। মন্দির তৈরির দাবি জোরালো হওয়ার মধ্যেই রামদেবের মত, রাম রাজনীতির বিষয় নয়, দেশের গর্বের ব্যাপারে। রাম আমাদের পূর্বসূরী, আমাদের সংস্কৃতি, গর্ব, আত্মা সবই। তাঁকে নিয়ে রাজনীতি ঠিক নয়। পাশাপাশি রামদেব বলেন, এবার জনগণকে যদি নিজেদেরই মন্দির গড়তে হয়, তার মানে হবে তাঁরা বিচারব্যবস্থা বা সংসদকে সম্মান করেন না।
প্রসঙ্গত, ২০১০ এ এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায় দেয়, অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিটি তিন পক্ষ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া ও রাম লালার মধ্যে সমান তিন ভাগে বিলি করা হোক। তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে ১৪টি সংগঠন।