নয়াদিল্লি: ভারতীয় অর্থনীতিকে এখন ধস নামার আতঙ্ক গ্রাস করেছে। ঠিক সেই সময়ই নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে সামনে এল বিজেপির অন্তর্কলহ। একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা এবার প্রকাশ্যে দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন। জেটলিকেই ভারতীয় অর্থনীতির বর্তমান করুণ পরিস্থিতির জন্যে দায়ী করেছেন যশবন্ত। তাঁর কথায় দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আসলে দেশবাসীকে গরীবী ঠিক কী, সেটা খুব কাছ থেকে দেখাতে চেয়েছেন।
এইমুহূর্তে ভারতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নিম্নগামী। এর জন্যে কে বা কারা দায়ী, সেপ্রসঙ্গে এখনও যদি মুখ না খোলেন তিনি তাহলে দেশের মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে বলেও নিজের বক্তব্যে বলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বিজেপির বহু নেতা-কর্মীরাই বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতির কথা বুঝতে পারলেও ভয় মুখ খুলছেন না। গত তিন বছরে নিজের দলের কোনও সদস্যের থেকে এভাবে সমালোচিত হতে হয়নি জেটলিকে। যশবন্ত তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের অনেক আগেই জেটলির নাম অর্থমন্ত্রীর পদের জন্যে চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি অমৃতসর থেকে হেরে গেলেও মন্ত্রী হতেন, বলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।
সিনহার দাবি, সরকারে প্রত্যেকে মনে করেন, জেটলি হলেন সবচেয়ে দক্ষ এবং সেরা মন্ত্রী। কিন্তু কঠিন সময় একজন দক্ষ নেতার ২৪ ঘণ্টা সজাগ থেকে প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত্, সেসময়ই অসফল হলেন জেটলি। দেশের মানুষকে সঠিক বিচার দিতে পারলেন না। যশবন্তের দাবি, অর্থনীতির উদারীকরণ পরবর্তী যুগে যেসমস্ত অর্থমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভাগ্যবান জেটলি। কারণ, তিনি বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে যে ডিপ্রেশন এসেছিল, তার পুরো ফায়দাটাই নিতে পারতেন। এই অভাবনীয় ফায়দা অসাধারণ ভাবে ব্যবহার করা যেত অর্থনীতির উন্নয়নে। যদিও অর্থনীতিতে থমকে থাকা বিভিন্ন প্রকল্প এবং ব্যাঙ্ক এনপিএ-র সমস্যা তখনও ছিল, কিন্তু অরিশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়ার ফায়দা নেওয়ার বদলে, সেটা ব্যবহারই করতে পারল না বর্তমান সরকার। তারসঙ্গে অন্য সমস্যা একইরকম ভাবে থেকে গেল, বরণ সেটা আরও খারাপ পরিণতি নিয়েছে, দাবি সিনহার।
বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ভারত থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, শিল্পক্ষেত্রে উত্পাদন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, নির্মাণ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার থমকে গেছে। অন্যান্য সার্ভিস সেক্টরেও স্থবির পরিস্থিতি। নোট বাতিলের প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ। কার্যত অর্থনীতির মেরুদণ্ডকেই ভেঙে দিয়েছে সরকারের এই সিদ্ধান্ত। তারপর সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া জিএসটি কার্যকরের সিদ্ধান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অগুনতি মানুষ কাজ হারিয়েছেন।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতার দাবি, ২০১৫ সালে জিডিপি নির্ণয়ের পদ্ধতিও বদলে দেয় বর্তমান সরকার। আগের হিসেবে যদি নির্ণয় করা যায়, তাহলে বর্তমানের ৫.৭ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধির হার মানে সেটা আসলে ৩.৭ শতাংশ বা তার চেয়েও কম।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কেউ যাতে মুখ না খোলে, সেইজন্যে বিরোধী দলের সদস্যদের দমিয়ে রাখতে সিবিআই এবং আয়কর আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই পড়তে হচ্ছে আয়কর বা সিবিআই হানার সামনে। তাঁর দাবি, তাঁরা যখন বিরোধী আসনে ছিলেন, তখন এই নীতির বিরোধিতা করলেও, এখন বর্তমানে এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর আশা, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতির হাল বদলাবে। তারপরই তিনি কটাক্ষ করে বলেন, আসলে দেশের প্রধানমন্ত্রী বারংবারই বলেন, তিনি গরীবীকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তাই বর্তমান অর্থমন্ত্রী নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, দেশবাসীরাও যেন সেই গরীবীকে খুব কাছ থেকে অনুভব করেন।
নোট বাতিল: জেটলি চেয়েছিলেন ভারতীয়রা খুব কাছে থেকে গরীবী দেখুক, যেমন মোদী দেখেছেন, কটাক্ষ যশবন্ত সিনহার
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
27 Sep 2017 01:49 PM (IST)
দেশ (nation) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -