কলকাতা: করোনার উদয়, ছড়িয়ে পড়া এবং নরসংহার- সবই এখনও রহস্য। যেমন নিশ্চিতভাবে এখনও জানা যায়নি, কবে এই সংক্রমণ শেষ হবে। তবে ২০২০ কুখ্যাত হয়ে থাকবে অতিমারীর গ্রাসে পুরোপুরি চলে যাওয়ার জন্য। এই রোগ দেখা দেওয়ার ৩ মাস পর ভারতে লকডাউন শুরু হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যায়, শুরু হয় রাতের কারফিউ, বন্ধ করে দেওয়া হয় থিয়েটার, সিনেমা হল, শপিং মল। ঝাঁপ ফেলে দোকানপাট, কর্মহীন হন লক্ষ লক্ষ মানুষ, শুরু হয় শ্রমিকদের ঘরের পানে পথ চলা।

কিন্তু এত সব মন খারাপ করা ছবির মধ্যে ২০২০ আমাদের কিছু উপকারও তো করেছে। এমনই কিছু মুহূর্ত দেখে নেওয়া যাক।

১. পরিষ্কার বাতাস, ঝকঝকে পরিবেশ- কেউ ভেবেছিল, শিলিগুড়ি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে? রায়গঞ্জ, তরাই, ডুয়ার্স এমনকী কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকেও বাড়ির সামনে উঁকি মেরেছে রাজকীয় এই শৃঙ্গ। পঞ্জাবের জলন্ধর থেকে যেমন দেখা গিয়েছে হিমালয়ের ধৌলাধার রেঞ্জ। বায়ু দূষণের জন্য দিল্লির এত বদনাম কিন্তু লকডাউনে আবহাওয়ার চোখে পড়ার মত উন্নতি হয়, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ হয় সর্বনিম্ন, ২০১৮-র জুলাইয়ের পর। সরে যায় ধোঁয়াশা, পরিষ্কার হয় আশপাশ।



২. অরণ্যের ফিরে আসা- দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ওপর উঠে পড়েছে রেসকোর্সের ঘোড়াগুলো। হরিদ্বারের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে বন্য জন্তু। নয়ডার মলের সামনে আপন মনে হেঁটে যাচ্ছে নীলগাই। কেরলের ওয়ানাড়ে রাস্তার ওপর উঠে আসে বুনো হাতি। লকডাউনে মানুষ ছিল ঘরে আর বুনো জন্তুরা দখল করে নেয় তাদের হারিয়ে ফেলা সাম্রাজ্য।



৩.  মহাকাশ আরও কাছে- ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় ২০২০ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইসরোর গবেষণায় যুক্ত হয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্র। ১৭ জানুয়ারি ৩,৩৫৭ কেজির কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট GSAT-30 মহাকাশে পাঠায় তারা। আর বছরের শেষে ইসরো সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে PSLVC50, CMS01-কে পাঠিয়েছে কক্ষপথে। এই নিয়ে ৪২তম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করল ভারত।



৪. সোনু সুদ- নায়ক নন, নেহাত ভিলেন। তাও এমন কিছু কেউকেটা ভিলেন নন। কিন্তু লকডাউনের ভারতে ত্রাতার ভূমিকা নিয়ে উঠে আসেন সোনু সুদ। বাস, ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিন রাজ্যে আটকে পড়া হাজার হাজার মানুষকে সম্পূর্ণ নিজের খরচে বাড়ি পাঠান তিনি। হাতে তুলে দেন, খাবার, জল, এমনকী নতুন কর্মসংস্থানের জন্য খোলেন প্রবাসী রোজগার অ্যাপ। আর এখন তো কৃষকের ট্র্যাক্টর, শিক্ষার্থীর কম্পিউটার- সব কিছুরই ব্যবস্থা করছেন তিনি।



৫. ধারাভি কোভিড মডেল- এশিয়ার সব থেকেবড় বস্তি মুম্বইয়ের ধারাভিতে যেভাবে করোনা সংক্রমণ রুখে দেওয়া হয়েছে তার প্রশংসা করেছেন WHO প্রধান টেড্রস আধানম ঘেব্রেসাস। তিনি বলেছেন, এই বস্তির প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২.২৭ লাখ লোক থাকেন। করোনা গোটা এলাকা শ্মশান করে দিতে পারত। অথচ করোনা সংক্রমণ আটকানো গিয়েছে ধারাভিতে।



৬. DRDO- ২ মাসের মধ্যে সফলভাবে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা DRDO। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই পরীক্ষা করেছে তারা।