নয়াদিল্লি:  ছোট ছোট মেয়েগুলোর কারও বয়স ছয়, কারও সাত, কেউ বা আট-নয়। তাদের সামান্য চকোলেট, বা সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে, কখনও আবার বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তারা দেখে, তাদের কোনও এক অন্ধকার, ভাঙা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, বিছানার সঙ্গে বেধে দেওয়া হচ্ছে। তারপর তাদের নিমাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে ছুরি বা ব্লেড চালিয়ে অপটু হাতে ঐতিহ্যের নামে ছেদ করা হয় যৌনাঙ্গের। ছোট একরত্তি মেয়েগুলো তাদের শরীর থেকে কী কাটা হল, কেন ছেদ পড়ল, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। শুধু থাকে দীর্ঘদিনের রক্তপাত, যন্ত্রণা, অনেক সময় সংক্রমণ।


মহিলাদের যৌনচ্ছেদ, অনেক ভাষাতেই মানুষের কাছে এই রীতির পরিচিতি। কখনও বলা হয় 'ফিমেন জেনিটাল মিউটিলেশন', কখনও বলা হয় 'খটনা' অথবা 'খাফজ'। মুসলিম ভোরা সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রথার প্রচলন রয়েছে। ভারতে এখনও এই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই প্রথা চালু রয়েছে, এবং এদেশে এই নিয়মের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর আইন নেই। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জ এই রীতিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তালিকাভূক্ত করেছে। কিন্তু ভারতে এখনও এই প্রথা রমরম করে চলছে।

কিন্তু কেন কিছু মেয়েকে এই নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে হয়

ভোরা সম্প্রদায়ের মধ্যে 'ক্লিটোরিস' বা 'ভগাঙ্কুর'কে 'হারাম কি বোটি' বা 'পাপের মূল' সূত্রও বলা হয়। অথবা আরও সহজ ভাষায় বললে অবাঞ্ছিত চামড়া। কয়েক দশকের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। যদি মহিলার যৌনাঙ্গ ছেদ না করা হয়, তাহলে একজন নারী এর থেকে যে আনন্দ আসে, সেটা উপভোগ করবে। এরফলে বিয়ের পরে একজন মহিলা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে, যার জন্যে লজ্জায় পড়তে হতে পারে ভোরা সম্প্রদায়কে। তাই মহিলারা যাতে শারীরিক সম্পর্কের সময় কোনও রকম আনন্দ উপভোগ না করতে পারে, সেই কারণেই ওই সম্প্রদায় ছোট ছোট মেয়েদের বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর আগেই যৌনচ্ছেদ করে দেয়।

এটা করেন কারা

মূলত ওই সম্প্রদায়ের প্রবীণ মহিলারা এই কাজ করেন। তাঁদের কারও পেশাগত কোনও প্রশিক্ষণ থাকে না। ছুরি বা ব্লেড ব্যবহার করে সম্পূর্ণ করা হয় প্রক্রিয়াটি।

যে সমস্ত মেয়েদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে, প্রাপ্তবয়সে পৌঁছনোর পর তাঁরা জানিয়েছেন, বিয়ের পর তাঁরা কোনও দিন শারীরিক সম্পর্ক উপভোগ করেননি। তবে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, ভোরা সম্প্রদায়ের মানুষরা মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে প্রগতিশীল গোষ্ঠী। এঁরা নারী শিক্ষাকে সমর্থন করে, মেয়েদের পড়তে বাইরে পাঠায়। সেখানে এধরনের প্রথার প্রচলন নেহাতই দুর্ভাগ্যজনক।

ভারতে এই প্রথা চালু রয়েছে, কারণ এখানে এটা বন্ধের জন্যে কোনও কঠোর আইন নেই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, এরমধ্যেই যদি এই নিয়ম বন্ধের জন্যে কঠোর আইন চালু না করা হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৮ মিলিয়ন মহিলার যৌনচ্ছেদের মতো নির্মম ঘটনা ঘটবে।