নয়াদিল্লি: গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদভবন। যাবতীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সেখানেই। তাই অধিবেশন চলাকালীন হইচই, শোরগোল নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়েলে নেমে, স্পিকার এবং প্রিসাইডিং অফিসারের চেয়ারের ঘিরে বিক্ষোভ, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে বিক্ষোভ, কাগজ ছোড়াছুড়ি চোখে পড়ে প্রায়শই। কিন্তু নয়া সংসদভবনে চিরাচরিত সেই দৃশ্য হয়ত আর চোখে পড়বে না। বিরোধীদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ঢাকতে তেমনই ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সামনে আসছে অভিযোগ (New Parliament Building)। 


নয়া সংসদভবনে, স্পিকার এবং প্রিসাইডিং অফিসারের বসার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা আগের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এ যাবৎ লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সাংসদদের বসার আসন যেখান থেকে শুরু, তার চেয়ে এক ধাপ নীচে, আলাদা করে বসার ব্যবস্থা ছিল স্পিকারের। ফলে সরকারি বিল, প্রস্তাব এবং অন্য বিষয়ে বিরোধিতা জানাতে সেই ওয়েলে নেমে যেতেন সাংসদরা (Parliament Building Inauguration)। 


সংসদের ক্যামেরায় ধরা পড়ত সেই দৃশ্য। স্পিকার এবং প্রিসাইডিং অফিসারকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ, দাবিদাওয়া, ধিক্কার জানিয়ে লেখা পোস্টার তুলে ধরা থেকে কাগজ ছুড়ে প্রতিবাদ জানানো, সব কিছুই দেখা যেত। কিন্তু নয়া সংসদভবনে স্পিকারের বসার ব্যবস্থা হয়েছে বেশ কিছুটা উঁচুতে। ফলে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে সাসংদরা স্পিকার বা প্রিসাইডিং অফিসারের নাগালই পাবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: New Parliament Building: ‘নিজের রাজ্যাভিষেক ভেবে বসেছেন’, সরাসরি মোদিকে কটাক্ষ রাহুলের


শুধু তাই নয়, নয়া সংসদভবনে আগের চেয়ে অনেক সংখ্যক বেশি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তার লেন্সে ধরা পড়ে কক্ষের প্রতিটি কোণ।  তাই কন্ট্রোল রুমে বসেই অধিবেশন কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখালেও, দিক বদলে ফেলা সম্ভব মুহূর্তে, তাতে বিরোধীদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখাই যাবে না বলেও আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। 


এর আগে, পুরনো সংসদভবনেই একাধিক বার এমন অভিযোগ উঠেছে। সেই সময় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সংসদের ঘটনাক্রমে কাঁচি চালানোর অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি ছিল, বিরোধীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওজর-আপত্তি, বিক্ষোভ দেখালে, ক্যামেরা ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। শুধুমাত্র স্পিকার এবং শাসকদলে মন্ত্রীদেরই দেখানো হয় ক্যামেরায়। 


একাধিক বার বিরোধীদের বিক্ষোভ কাটছাঁট করে দেখানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠে আসে। এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীও। তাঁর দাবি ছিল, বিরোধীরা সরকারকে প্রশ্ন করলে, সমালোচনা করলে, আড়াল থেকে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বিরোধীদের কথা সাধারণ মানুষের কানে পৌঁছতেই না পারে। 


উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের নির্দেশিকায় লোকসভার ক্যামেরায় বিরোধীদের বিক্ষোভ, হট্টগোল, ওয়াক আউট দেখানোর অনুমতি ছিল না। ২০০৫ সালের মে মাসে সেই নির্দেশিকায় বদল আনেন তৎকালীন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সংসদে সরকারের অবস্থান দেখানো যেমন জরুরি, তেমনই বিরোধিদের দাবি-দাওয়া, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এমনকি ওয়াকআউটও সকলের কাছে পৌঁছনো উচিত বলে মত ছিল তাঁর। নয়া সংসদভবনে কোনও রকম বিরোধিতাই যাতে মানুষের চোখে ধরা না পড়ে, তার ব্য়বস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ অবিজেপি শিবিরের।