নয়াদিল্লি: নিত্যদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারী নির্যাতবের খবর উঠে আসছে। সেই নিয়ে প্রতিবাদ, আন্দোলনও মাথাচাড়া দিচ্ছে। কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয় আজও উপেক্ষিত ভারতীয় সমাজে। আর সেই নিয়ে এবার নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। বৈহাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় আনার বিরোধিতা করল তারা। (Marital Rape)


বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে আদালতে হলফনামা দিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। সেই হলফনামায় বলা হয়েছে, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় আনার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ এক্ষেত্রে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা আগে থেকেই মজুত রয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্র সরকার আরও জানিয়েছে যে, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ ঘোষণা করার এক্তিয়ার নেই শীর্ষ আদালতের। (Supreme Court)


আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার আরও জানিয়েছে যে, বৈবাহিক ধর্ষণ যত না আইনি বিষয়, তার চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক সমস্যা। সরাসরি সমাজের উপর এর প্রভাব পড়ে। এ নিয়ে সঠিক পর্যালোচনা না করে, সবপক্ষের মতামত না নিয়ে, রাজ্যের অবস্থান না জেনে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ঠিক হবে না।


বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় বিরোধিতা করে আদালতে কেন্দ্র জানায়, ভারতের মতো দেশে বিয়েকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরা হয়। পারস্পরিক বাধ্যবাধকতা জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। সাতপাকে ঘুরে যে অঙ্গীকার করেন স্বামী-স্ত্রী, তা কোনও ভাবেই লঙ্ঘন করা যায় না। বৈবাহিক সম্পর্কে মহিলাদের সম্মতির বিধিবদ্ধ ভাবে সংরক্ষিত। কিন্তু শাস্তিমূলক বিধানের আওতায় আনার প্রশ্ন একেবারে আলাদা।


কেন্দ্র আরও জানায়, বৈবাহিক সম্পর্কে সঙ্গীর কাছ থেকে যৌন সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রত্যাশা থাকে। তাই বলে ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে জোর করতে পারেন না স্বামী। কিন্তু ধর্ষণ আইনে শাস্তি দেওয়া কিছুটা বাড়াবাড়ি এবং সামঞ্জস্যহীন। বিবাহিত মহিলাদের উপর নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধ করতে, গার্হস্থ্য হিংসা রুখতে আইন রয়েছে, যা যথেষ্ট সহায়ক বলে মত কেন্দ্রের।


বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে আবেদনের শুনানি চলছে শীর্ষ আদালতে। দিল্লি হাইকোর্টের রায়টি ছিল দ্বিধাবিভক্ত, যেখানে স্ত্রী ধর্ষণের অভিযোগ আনলে স্বামীকে শাস্তি প্রদানের বিধান নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয় বিচারপতিদের মধ্যে। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে ওঠে মামলাটি। এ নিয়ে কর্নাটক হাইকোর্টের একটি মামলাতেও স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। 


সেই নিয়েই এদিন নিজেদের অবস্থান জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে বৈবাহিক ধর্ষণের ধারাটিতে স্বামীকে অব্যাহতি দেওয়ার যে বিষয়টি রয়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্রের দাবি, কেন্দ্রের দাবি, যৌন সম্পর্ক বৈবাহিক সম্পর্কের একটিমাত্র দিক। এই অব্যাহতি তুলে নিলে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটি নড়বড়ে হয়ে যাবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিতেও হয়, তা সংসদীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে হবে, বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নয়। অন্যথায় সমাজের সর্বস্তরে এর প্রভাব পড়বে।