নয়া দিল্লি : বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা। তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের আবেদন। ট্রেন দুর্ঘটনা এড়াতে 'কবচ' প্রকল্প নিয়ে গাইডলাইন জারির আর্জি জানানো হয়েছে।


বালেশ্বরে ৩টি ট্রেনের দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতর সংখ্যা হাজারের বেশি। পরিচয়হীন মৃতদেহের স্তূপ জমছে অস্থায়ী মর্গে। প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন বহু মানুষ। ১৬০ জনের দেহ শনাক্ত করা যায়নি। ভুবনেশ্বর এইমসে ১০০ জনের দেহ রাখা হয়েছে। পরিজনেদের কথা ভেবে মৃতদেহের ছবি তুলে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনাও সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলে এখনও রয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি কামরা। সেগুলির মধ্যে আরও দেহ আটকে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না উদ্ধারকারীরা। যদিও উদ্ধারকারী দলের দাবি, অধিকাংশ দেহ এবং যাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরাগুলি থেকে ৪৪ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে এনডিআরএফ।  


কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এত মানুষের মৃত্যু হল কী করে ? রেলের অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস 'কবচ' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অধীর চৌধুরীরা। গত বছর বাজেট পেশের দিন সাংবাদিক বৈঠকে জলপাইগুড়ি দোমোহনিতে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে রেলমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী, " ক্ষমতাশালী এলএইচবি কোচ তৈরি করা হচ্ছে এবং সমস্ত পুরানো কোচগুলিকে শীঘ্রই এলএইচবি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। পরিকাঠামোর উন্নতিতে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।" আর বাজেট প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ শুনিয়েছিলেন রেলের 'কবচ' প্রকল্পের কথা। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "আত্মনির্ভর ভারত-এর অংশ হিসাবে, ২ হাজার কিলোমিটার নেটওয়ার্ককে 'কবচ'-এর আওতায় আনা হবে। এই প্রযুক্তি নিরাপত্তা ও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বিশ্বমানের প্রযুক্তি।" 


কিন্তু সব আশ্বাসই সার ! তার পরেও এড়ানো গেল না ভয়াবহ দুর্ঘটনা ! শুক্রবার বালেশ্বরের কাছে বাহানাগা বাজারে লাইনচ্যুত হয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি বগি। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। এক ঝলকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কোন কামরা কোন ট্রেনের ! দুর্ঘটনার অভিঘাতে দুমড়ে মুচড়ে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের একের পর এক বগি। এমনকী, কম ক্ষতিগ্রস্ত কামরার ছবি দেখলেও শিউরে উঠতে হয়।


যদিও ঘটনাস্থলে গিয়ে রেলমন্ত্রী দাবি করেছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে আধুনিক এবং নিরাপদ এইচএলবি কোচ ব্যবহার করা হয়েছিল। তা হলে এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা দেখতে হল কেন ? প্রশ্ন উঠছে, রেলমন্ত্রীর LHB কোচের দাবি নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে সমগ্র ঘটনার তদন্ত দাবি করে দেশের শীর্ষ আদালতে দায়ের হল মামলা।