বালেশ্বর : জ্ঞানেশ্বরীর ভয়াবহ স্মৃতি ফেরাল করমণ্ডল। বালেশ্বর দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২৩৩ ছুঁয়েছে। আহতের সংখ্যা ৯০০। তাঁদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। বালেশ্বরের ফকির মোহন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে কথা বলেন তিনি।


 






এদিকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাতেই বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থলে যান রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন। 


ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কেঁপে উঠেছে গোটা দেশ। যার ভয়াবহতা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। বিশাল যাত্রীবাহী দূরপাল্লার ট্রেনটা তালগোল পাকিয়ে গেছে। ধাতব কামরাগুলো দেশলাই বাক্সের মতো দুমড়ে মুচড়ে একটার ওপর আরেকটা উঠে গেছে। কামরার ভিতরে লোহার কাঠামো, সিট সব উপড়ে গেছে। দরজা, জানলা আর আস্ত নেই। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে আহতরা। চাদরে মু়ড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সার সার মৃতদেহ। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন ঘিরে চিৎকার চেঁচামেচি। 


আর তাকে ছাপিয়ে অ্য়াম্বুল্য়ান্সের সাইরেনের শব্দ। শুক্রবার রাতে বালেশ্বরের কাছে বাহানগা এলাকা যেন পরিণত হল কার্যত মৃত্য়ুপুরীতে! বেঙ্গালুরু-হাওড়া এক্সপ্রেসের লাইনচ্য়ুত দুটি কামরায় ধাক্কা মেরে, উল্টে গেল যাত্রীবোঝাই শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টা কামরা। কয়েকটি কামরা ছিটকে গিয়ে পড়ে পাশের মালগাড়ির ওপর। দুর্ঘটনায় বহু মানুষ প্রাণ হারান। যাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন, তাঁদের সেটা বিশ্বাস করতেও বেশ কিছুক্ষণ লেগেছে। কোনওমতে বেরিয়ে এসে, ট্রেনের অবস্থা দেখে তাঁরা শিউড়ে উঠেছেন।


প্রত্য়ক্ষদর্শীদের দাবি, সংঘর্ষের পর বহু যাত্রী পাশের একটি খালে গিয়ে ছিটকে পড়েন। 


শুক্রবার সন্ধেয় এই দুর্ঘটনার পর প্রথমে স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে হাত লাগান। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাঁরাই একে একে আহত যাত্রীদের বার করে আনতে শুরু করেন। আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় কাছের হাসপাতালে। চাদরে মুড়ে বার করা হয় পরপর মৃতদেহ। কিছুক্ষণ পরে সেখানে পৌঁছোন উদ্ধারকারী দলের সদস্য়রা। আহত যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য় রাজ্য় সরকার ২৫টি অ্য়াম্বুল্য়ান্স পাঠায়। এছাড়া কয়েকটি বাসও পাঠানো হয় উদ্ধারকাজের জন্য়। 


এদিকে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করা হয়েছে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। যার জেরে বিপাকে পড়েন বহু যাত্রী। ট্রেন বাতিলের ঘোষণা করতেই শালিমার স্টেশনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন যাত্রীরা।  দুর্ঘটনার কবলে পড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেস শুক্রবার দুপুর ৩টে, শালিমার স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়েছিল। দুর্ঘটনার জেরে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের শালিমার-পুরী সাপ্তাহিক এক্সপ্রেস এবং ৯টা ২৫ মিনিটের শালিমার-সম্বলপুর এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়। 


কিন্তু, যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেন বাতিলের কথা অনেক পড়ে ঘোষণা করা হয়। তার আগে ট্রেন ছাড়ার সময় জানার জন্য, স্টেশন মাস্টারের ঘরে ভিড় জমান যাত্রীরা। তাঁদের দাবি, ট্রেন দেরিতে ছাড়বে বলে আশ্বাস দেওয়া তাঁদের। কিন্তু, শেষমেশ তা বাতিল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা।