চণ্ডীগড়: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'মন কি বাত' (Mann Ki Baat) অনুষ্ঠানের ১০০তম পর্বে শামিল না হওয়া 'অপরাধ'। শস্তিস্বরূপ এক সপ্তাহের জন্য বসিয়ে দেওয়া হল ৩৬ জন নার্সিং পড়ুয়াকে। নার্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয় চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ (PGIMER)। সেখানেই নার্সিং পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে, যাকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।


নির্দেশিক জারি করে অনুষ্ঠানে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল


গত ৩০ এপ্রিল মোদির রেডিও অনুষ্ঠান  'মন কি বাত'-এর ১০০তম পর্ব ছিল। সেই উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন হয়েছিল ক্যাম্পাসে। PGIMER-এর ডিরেক্টর সেই নিয়ে নির্দেশিকাও জারি করেছিলেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছিলেন। তার পরেও ৩৬ জন নার্সিং পড়ুয়া তাতে যোগ দেননি বলে অভিযোগ। তার জন্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। এক সপ্তাহের জন্য বসিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। হস্টেল থেকেও বেরোতে পারবেন না তাঁরা।



কর্তৃপক্ষের এই শাস্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নার্সিং পড়ুয়ারা। তাঁদের মতে, 'মন কি বাত' শোনার জন্য তাঁদের জোর করতে পারে না প্রতিষ্ঠান। এটা শুধুমাত্র স্বতন্ত্রতার পরিপন্থীই নয়, ব্যক্তি স্বাধীনতারও বিরুদ্ধে। কর্তৃপক্ষের তরফে জারি করা নির্দেশিকার একটি প্রতিলিপি সামনে এসেছে, যাকে ডিরেক্টরের দফতরে 'মন কি বাত' শুনতে হবে বলে লেখা রয়েছে। PGIMER-এর তরফে ওই নির্দেশিকার সত্যতা অস্বীকারও করা হয়নি। বরং PGIMER-এর দাবি, বিষয়টিকে খামোকা বড় করে দেখানো হচ্ছে। অনুষ্ঠানে গরহাজিরার কোনও কারণও দেখাতে পারেননি পড়ুয়ারা। তাতেই এমন পদক্ষেপ।


পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, 'মন কি বাত' না শোনার জন্য তৃতীয় বর্ষের ২৮ জন এবং প্রথম বর্ষের আট জন পড়ুয়াকে শাস্তিপ্রদান করা হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত সকলেই মহিলা। পড়ুয়াদের দাবি, হস্টেলের ওয়ার্ডেনই এ নিয়ে অভিযোগ জানান। ওয়ার্ডেনের যুক্তি, আগেই সতর্ক করা হয়েছিল সকলকে। ২৯ এপ্রিল রাতে এবং ৩০ এপ্রিল সকালেও বার বার যেতে বলা হয়। তার পরেও ৩৬ জন অনুষ্ঠান শোনেননি।



PGI নার্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন যদিও কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সংগঠনের সভাপতি মঞ্জনিক জানান, কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী। তাঁর যুক্তি, 'মন কি বাত' কোনও শিক্ষা সংক্রান্ত ভাষণ বা সেমিনার নয় যে তাতে বাধ্যতামূলক ভাবে সকলকে উপস্থিত থাকতে হবে। শিক্ষামূলক সেমিনারে না গেলেও কখনও এমন শাস্তির মুখে পড়তে হয় না কাউকে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, 'মন কি বাত' একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান। তাতে পড়ুয়াদের যোগদান বাধ্যতামূলক করাই ভুল। 


এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরাও। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ট্যুইটারে লেখেন, 'আমিও 'মাঙ্কি' বাত শুনিনি। একবারও শুনিনি, কখনও শুনিনি। আমাকেও কি শাস্তির মুখে পড়তে হবে? আমিও কি এক সপ্তাহ বাড়ির বাইরে বেরোতে পারব না? সত্যিই খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি'।


তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ নার্সিং শিক্ষার প্রতিষ্ঠান


উল্লেখ্য, ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালিত হয়। আর ওই দিনই ৩৬ জন নার্সিং পড়ুয়াকে শাস্তিপ্রদানের বিষয়টি সামনে এসেছে। তাতে নিন্দায় সরব হয়েছেন অনেকেই।