মুম্বই: বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ঘিরে তরজা চরমে। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম আইনজীবী আরতি অরুণ সাঠে-কে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। সেই নিয়ে জোর আপত্তি তুলছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। তাঁদের দাবি, বিজেপি-র প্রাক্তন মুখপাত্র আরতি, ওই আসনের নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে না বলে অভিযোগ উঠছে। (Bombay High Court)

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্র বিজেপি-র মুখপাত্র নিযুক্ত হন আরতি। ব্যক্তিগত ও পেশাগত কারণ দেখিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ওই পথ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি মুম্বই বিজেপি-র লিগাল সেলের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব ছেড়ে দেন। বিজেপি-র প্রাথমিক সদস্যতাও ত্যাগ করেন আরতি। আরতির বাবা অরুণ সাঠেও বর্ষীয়ান আইনজীবী, তিনিও রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়। বিজেপি-র সক্রিয় কর্মী তিনি। দীর্ঘ সময় RSS-ও করেছেন। (Aarti Arun Sathe)

এর পর, চলতি বছরের ২৮ জুলাই বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত করার জন্য আইনজীবী অজিত ভগবানরাও কাড়েঠঙ্কর, সুশীল মনোহর ঘোড়েশ্বের সঙ্গে আরতির নাম সুপারিশ করে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। আইনজীবী হিসেবে ২০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে আরতির। মূলত কর, SEBI, SAT, শুল্ক, আবগারি, বৈবাহিক ঝামেলা সংক্রান্ত মামলাই সামলেছেন এতদিন।

কিন্তু বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে আরতির নিযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শরদ পওয়ার)-র বিধায়ক তথা সাধারণ সম্পাদক রোহিত পওয়ারের মতে, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সকলের জন্য জরুরি। এক্ষেত্রে সেই রীতি বজায় থাকছে না। তাঁর কথায়, ‘প্রকাশ্যে শাসকদলের হয়ে সওয়াল করেন যিনি, তাঁকে বিচারপতি নিয়োগ করার অর্থ গণতন্ত্রের শিকড়ে আঘাত হানা। একজম বিচারপতিকে অত্যন্ত দায়িত্বশীল হতে হয়, নিরপেক্ষ হতে হয়। কিন্তু শাসকদলের কাউকে ওই আসনে বসানো হলে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে যেমন প্রশ্ন ওঠে, তেমনই আসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে’। 

মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘নির্লজ্জতার সব সীমা লঙ্ঘিত। আশ্চর্যজনক ভাবে, বিজেপি-র মুখপাত্রদের বিচারপতি নিযুক্ত করা হচ্ছে। দেশের গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেছে বিজেপি’।

এ নিয়ে আরতি কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও, মহারাষ্ট্রের বিজেপি সভাপতি নবনাথ বানের দাবি, ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি বিজেপি মুখপাত্রের পদ ছেড়ে দেন আরতি। তাই ভুল তথ্য ছড়ানো উচিত নয় আরতির পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপিও তুলে ধরেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এবং অন্য অভিজ্ঞ বিচারপতিরা। তাঁরা তিনজনের নাম সুপারিশ করেছেন। কেন্দ্রের তরফে এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। তাদের বক্তব্য, 'আরতি অরুণ সাঠে মহারাষ্ট্র বিজেপি-র মুখপাত্র। তাঁকে এখন বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি করা হচ্ছে। বিচারপতির আসন যদি একটি রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থার অখণ্ডতা বলে কিছু থাকে কি? এটা একটা প্যাটার্ন, যেখাবে বিজেপি-র প্রতি আনুগত্য সংবিধানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিচারব্যবস্থা একসময় আমাদের গণতন্ত্রের প্রহরী ছিল, বর্তমানে সেটিকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত  থিয়েটারে নামিয়ে আনা হচ্ছে। পক্ষপাতিত্ব করে বিজেপি একেবারে হিসেব কষে কষে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে'।