নয়াদিল্লি: সুদীর্ঘ অভিনয় জীবন। IPL টিমের মালিকানাও। সেই প্রীতি জিন্টা ফের খবরের শিরোনামে। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার তাঁর নেওয়া ১৮ কোটি টাকার ঋণ মাফ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। নায়িকা যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, নিজের উপার্জনের টাকায় ঋণ শোধ করেছেন তিনি। তাঁর নামে অসত্য খবর প্রচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন। (Preity Zinta Loan Row)


সম্প্রতি New India Cooperative Bank-এর উপর নিষেধাজ্ঞা চাপায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ১২২ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও অভিমন্যু ভোয়ানকে। এর পরই ওই মামলায় প্রীতির নাম উঠে আসে। অভিযোগ ওঠে, New India Cooperative Bank থেকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন প্রীতি। তাঁর সেই ঋণ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। যাবতীয় সঞ্চয় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় যখন উদ্বিগ্ন গ্রাহকরা, সেই সময় প্রীতির ঋণ মাফ করে দেওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। (New India Cooperative Bank)


২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি ব্যাঙ্কের এক প্রাক্তন কর্মীই এ ব্যাপারে RBI-কে চিঠি লিখেছিলেন বলে জানা যায়। আর্থিক তছরুপ, দুর্নীতি, অনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে RBI এগজিকিউটিভকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। ওই ব্যক্তি জানান, হীরেন ভানু ব্যাঙ্কের দায়িত্বে আসার পর থেকে ম্যানেজারকে না জানিয়েই ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত কর্পোরেট ঋণ মঞ্জুর করার নিয়ম চালু হয়। এর ফলে মোটা টাকার ঋণগুলি অনুৎপাদক সম্পত্তিতে পরিণত হয় এক বছরের মধ্যেই। বলিউড অভিনেত্রী প্রীতির ১৮ কোটি টাকাও উদ্ধার করা যায়নি, শেষ পর্যন্ত তা মাফ করে দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন ওই কর্মী। সম্প্রতি RBI ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়াতেই গোটা বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। সামনে আসে ওই চিঠিও। 


কেরল কংগ্রেসের তরফে সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা পোস্ট করা হয়। প্রীতিকে নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টটি তুলে ধরে লেখা হয়, ‘বিজেপি-কে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হস্তান্তরিত করেছেন প্রীতি। বিনিময়ে তাঁর ১৮ কোটির ঋণ মাফ করে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে সেই ব্যাঙ্কই ভেঙে পড়েছে। নিজেদের সঞ্চয় ফিরে পেতে এখন রাস্তায় সাধারণ মানুষ’। সাম্প্রতিক কালে যেভাবে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গলা ফাটাচ্ছেন প্রীতি, তার নেপথ্যে ঋণ মকুবের ফলশ্রুতি বলেও দাবি করতে থাকেন কেউ কেউ।



সেই নিয়ে মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন প্রীতি। কংগ্রেসেরে পাশাপাশি, হর্ষদ মেহতা দুর্নীতিকাণ্ডের পর্দাফাঁস করা সুচেতা দালালকেও একহাত নেন তিনি। প্রীতি লেখেন, ‘ভূরি ভূরি অসত্য ছড়িয়ে পড়ছে। নিজের কেরিয়ারে বহু শ্রদ্ধেয় সাংবাদিককে ভুল খবর ছড়াতে দেখেছি। ভুল সংশোধনের গরজ পর্যন্ত দেখাননি, ক্ষমাও চাননি। আদালতে সেই নিয়ে লড়াই করতে গিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ হয়েছে আমার। কিন্তু এর দায় নিতে হবে। সঠিক তদন্ত ছাড়া যাঁরা এসব লিখছেন, নাম ধরে ধরে তাঁদের চিহ্নিত করব আমি।  সুচেতা দালাল, আপনি যদি আমার ভাবমূর্তির পরোয়া না করেন, আমিও আপনার ভাবমূর্তির পরোয়া করব না। সত্যাসত্য জানতে এর পর থেকে ফোন করে নেবেন আমাকে। আপনার মতো আমিও তিল তিল করে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছি’।



ঋণ মকুবের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ প্রীতি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিজেপি-র হাতে তুলে দিয়েছেন বলে যে লেখা পোস্ট করেছিল কেরল প্রদেশ কংগ্রেস, তাতেও প্রতিক্রিয়া জানান প্রীতি। তিনি লেখেন, ‘নিজের অ্যাকাউন্ট নিজেই চালাই আমি। ভুয়ো খবর প্রচার করার জন্য লজ্জিত হোন। কেউ আমার ঋণ মকুব করে দেননি। আমি স্তম্ভিত যে একটি রাজনৈতি দল এবং তাদের প্রতিনিধিরা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন, গুজবে অংশ নিচ্ছেন এবং আমার নাম ও ছবি ব্যবহার করে এসব ছড়াচ্ছেন। যে টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তার পুরোটাই শোধ করা হয়েছিল ১০ বছর আগে। আশাকরি জবাব পেয়ে গিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হবে না’। কিন্তু প্রীতির এই সাফাইয়েও বিতর্ক থামছে না। গোটা বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠছে।