নয়াদিল্লি: যুদ্ধ প্রায় একমাস ছুঁইছুঁই। মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ক্ষয়ক্ষতিরও কোনও ইয়ত্তা নেই। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাও বেরিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলের। তবে সবে একমাস, এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এক বা দু'কোটি নয়, সব মিলিয়ে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ইজরায়েলের রাজকোষ থেকে ৫১০০ কোটি ডলার বেরিয়ে যাবে বলে অনুমান, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকার সমান। ইজরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমই এই খরচ-খরচার হিসেব তুলে ধরেছে। (Israel Palestine War)


Israeli Calcalist Business নামের একটি সংবাদপত্র এই হিসেব তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধের একমাস পেরিয়েছে সবে। যুদ্ধ যদি আগামী আট থেকে ১২ মাস চলে, তাহলে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১০ শতাংশ বেরিয়ে যাবে রাজকোষ থেকে। তাও শুধুমাত্র গাজায় হামাসকে প্রতিহত করতেই এই টাকা বেরিয়ে যাবে। লেবাননের হেজবোল্লা সংগঠন, ইরান এবং ইয়েমেন যুদ্ধে যোগদান করলে খরচের বহর আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আরও ৩ লক্ষ ৫০ ইজরায়েলি নাগরিককে যুদ্ধে নামাতে হবে বলে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। (Israel Palestine Conflict)


প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে ওই সংবাদপত্র যে হিসেব প্রকাশ করেছে, সেই অনুযায়ী, ৪ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকাও কম বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে প্রতিরক্ষা খাতে দৈনিক খরচ বেড়ে ২০০০ কোটির অঙ্ক ছাড়িয়ে যেতে পারে। যুদ্ধ শেষ হলে, পুনর্বাসনে আরও কত টাকা বেরিয়ে যাবে, তার ইয়ত্তা নেই বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। ইজরায়েল সরকার যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। 


আরও পড়ুন: Barack Obama: 'কারও হাত পরিষ্কার নয়, অন্যায় কাজের সহযোগী সকলেই', প্যালেস্তাইন নিয়ে বললেন ওবামা


গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উদ্দেশে রকেট ছোড়ে প্যালেস্তাইনের হামাস সংগঠন। তার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এখনও পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান মিলেছে, তাতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত গাজায় ৯ হাজার ৪৮৮ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ২৪ হাজার ১৫৮। অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ১৫২ জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিক মারা গিয়েছেন। ইজরায়েলি সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ এবং হামলার মুখে পড়ে সেখানে আহতের সংখ্যা ২ হাজার ১০০। ইজরায়েলের তরফে যুদ্ধে মারা গিয়েছেন ১ হাজার ৪০৫ জন। সে দেশের আহতের সংখ্যা ৫ হাজার ৬০০। রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিভাগ জানিয়েছে, শুধুমাত্র উত্তর গাজাতেই ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন ৩ লক্ষ মানুষ।


যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে এই মুহূর্তে দ্বিধাবিভক্ত আন্তর্জাতিক মহল। এমনকি আমেরিকার ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও বিভাজন চোখে পড়ছে। মানবিকতার খাতিরে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে সওয়াল করছেন একাংশ। অন্য একটি অংশ আবার এখনও ইজরায়েলের সমর্থনে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও মুখ খুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "হামাস যা করেছে, তা ভয়াবহ। কোনও ভাবেই তার খণ্ডন সম্ভব নয়। কিন্তু একথাও সত্য যে, প্যালেস্তাইনের অধিগ্রহণ চলছে, সেখানে যা চলছে কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে কারও হাত পরিষ্কারই নয়।"


এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলের তরফে যুদ্ধবিরতির কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। বরং তাদের এক মন্ত্রী গাজায় পরমাণু বোমা হানার হুমকি দেন। বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর সরকার যদিও তাঁকে সমর্থন করেননি, কিন্তু লাগাতার গাজা এবং ওয়েস্টব্যাঙ্কে যে গতিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে কোথায় গিয়ে ইতি পড়বে, অনিশ্চিত আন্তর্জাতিক মহল।