নয়াদিল্লি: লোকসভায় কথা বলতে না দেওয়ার অভিযোগে স্পিকার ওম বিড়লার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী। যেভাবে সংসদে চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, গত সাত-আটদিন ধরে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে। আজও কথা বলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্পিকার কার্যত 'পালিয়ে গেলেন' বলে অভিযোগ রাহুলের। এর পাল্টা রাহুলের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সঙ্গে তাঁর একটি ভিডিও পোস্ট করেছে গেরুয়া শিবির, যেখানে প্রিয়ঙ্কার থুতনি ছুঁয়ে স্নেহ দেখিয়েছেন রাহুল। এ নিয়ে চরমে উঠেছে তরজা। (Rahul Gandhi)


বুধবার লোকসভায় রাহুলের উদ্দেশে টিপ্পনি করতে শোনা যায় স্পিকার বিড়লাকে। তিনি বলেন, "বেশ কিছু ঘটনা বজরে পড়েছে আমার, যেখানে সংসদের গরিমা খর্ব হয়েছে। সংসদে বাবা-মেয়ে, মা-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রীও সদস্য। আশা কর, বিরোধী দলনেতা সেই মতো আচরণ করবেন।" স্পিকারের এই মন্তব্যে কংগ্রেস সাংসদরা প্রতিক্রিয়া জানাতে গেলে আসন ছেড়েই উঠে যান স্পিকার। (Om Birla)


এর পরই সংসদ থেকে বেরিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন রাহুল। তিনি বলেন, "আমি যখনই কথা বলার জন্য উঠে দাঁড়াই, আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। আমরা যা বলতে চাই, তা বলতে দেওয়া হয় না আমাদের। আমি কিছু করিনি। চুপচাপ নিজের জায়গায় বসেছিলাম। একটি কথাও বলিনি। গত সাত-আটদিন ধরে আমাকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা নতুন কৌশল। বিরোধীদের কোনও জায়গা নেই। প্রধামন্ত্রী সেদিন কুম্ভমেলা নিয়ে বক্তৃতা করলেন। আমি বেকারত্ব নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। জানি না স্পিকার কী ভাবছেন, কিন্তু আমাদের কথা বলতে হচ্ছে না। অগণতান্ত্রিক ভাবে সংসদ চলছে।"



রাহুল আরও বলেন, "কী চলছে জানি না। আমি ওঁকে অনুরোধ করেছিলাম আমাকে কথা বলতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু উনি পালিয়ে গেলেন। এভাবে সংসদ চালানো যায় না। স্পিকার বেরিয়ে গেলেন, আমাকে কথা বলতে দিলেন না। উনি আমার সম্পর্কে ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। এর পর হঠাৎ অধিবেশ স্থগিত করে দিলেন, যার কোনও প্রয়োজন ছিল না।" 


কেন রাহুলকে কথা বলতে দেওয়া হল না, কেন তাঁকে আচরণের কথা স্মরণ করালেন, তা যদিও খোলসা করেননি স্পিকার বিড়লা। কিন্তু বিজেপি-র অমিত মালভিয়া একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, সংসদে ঢুকে বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার থুতনি ছুঁয়ে অভিবাদব জানাচ্ছেন রাহুল। এর পর প্রিয়ঙ্কার হাতও ধরেন তিনি। ওই ভিডিওর সঙ্গে স্পিকারের মন্তব্য জুড়ে দিয়েছেন অমিত। তাঁর বক্তব্য, 'লজ্জার বিষয় যে লোকসভার স্পিকারকে সংসদীয় আচরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে রাহুল গাঁধীকে। কংগ্রেস যেভাবে এই অপরিণত ব্যক্তিকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, তা লজ্জাজনক'।


গত সপ্তাহেও এ নিয়ে হুলস্থুল বাধে সংসদে। নরেন্দ্র মোদি কুম্ভমেলার ভূয়সী প্রশংসা করে বিরোধীদের আক্রমণ করলে, পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু নিয়ে সরব হন বিরোধীরাও। হতাহতের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সরকারের কাছে। সেই আবহে নীতি ৩৭২ প্রয়োগ করেন স্পিকার। ওই নীতি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রী বক্তৃতার সময় প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নন।



সেবারও স্পিকারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। স্পিকারের আচরণ নিয়ে আজও রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, "রাহুল গাঁধী একেবারে ঠিক বলেছেন। উনি বিরোধী দলনেতা, আমাদের সকলের নেতা। প্রথম বার নয়, এর আগেও উনি যখন কথা বলতে চাইছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পর বিরোধী দলনেতার বক্তৃতা করার কথা ছিল। কিন্তু সেদিনও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। আজও কথা বলতে দেওয়া হল না। এটা লজ্জাজনক, নিন্দনীয়। স্পিকারকে সম্মান করি। জানি না ওঁর উপর কী চাপ রয়েছে। কিন্তু এটা কতদিন চালাবেন?" শত্রুঘ্নর দাবি, বিরোধীদের মধ্যে অসম্ভব ভাল বক্তা রয়েছেন। এভাবে বেশিদিন আটকানো যাবে না।