নয়াদিল্লি : 'মোদি পদবি' মামলায় (Modi Surname Case) সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) স্বস্তি পেলেন রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। রাহুলের শাস্তির উপর স্থগিতাদেশ সর্বোচ্চ আদালতের। এই মামলায় রাহুলের বিরুদ্ধে ২ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল সুরাত আদালত। সেই নির্দেশের উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের জেরে সাংসদ পদ ফিরে পেতে চলেছেন কংগ্রেস নেতা। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট আজ মন্তব্য করে, নিম্ন আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি দিলেও, তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। যদিও জনপ্রতিনিধি হয়ে রাহুলের এ ধরনের মন্তব্য করা 'ঠিক হয়নি' বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের।
২০১৯-এর মানহানি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গুজরাতের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট যে রায় দেয়, তার বিরুদ্ধে এপ্রিল মাসে সুরাটের সেসন কোর্টের দ্বারস্থ হন রাহুল। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে এমনভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে যাতে তাঁকে সাংসদপদ থেকে বরখাস্ত করা যায়। তাঁর সঙ্গে নির্মমভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, 'এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে আবেদনকারীর ভাষণে কোনও ইতিবাচক দিক ছিল না। বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আরও সতর্ক থাকা উচিত। তবে, বরখাস্ত করলে শুধু ব্যক্তির অধিকারকেই প্রভাবিত করা হয় না, ভোটারদেরও তা প্রভাবিত করে।'
এর আগে আদালতে রাহুলের আইনজীবী এই যুক্তি দেন যে, 'বেকসুর খালাস পাওয়ার এটাই শেষ সুযোগ রাহুল গাঁধীর। মুক্তি পেলে তিনি সংসদে যেতে পারবেন এবং ভোটে লড়তেও পারবেন।' তাঁর সংযোজন ছিল, '৬৬ দিনের জন্য রায়দান রিজার্ভ রাখে হাইকোর্ট। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়, রাহুল ইতিমধ্যেই সংসদের দুটি অধিবেশনে যোগও দিতে পারেননি।' এই মামলার জেরে রাহুল সাংসদ পদ, সরকারি বাসভবন খোয়ালেও আইনি লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেননি। শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে রাহুলের এই মামলা শোনে বিচারপতি বিআর গাভী, পিএস নরসিমহা ও সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ।
রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, 'বিচারপর্ব শেষ হয়ে গেছে। রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত সরা হয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ নেই। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগকারী পূর্ণেশ মোদির প্রকৃত পদবি মোদি নয়। তিনি এটা পরিবর্তন করেছেন। উনি নিজেই বলেছেন যে তাঁর প্রকৃত পদবি মোদি নয়। তিনি মোধ বণিক সমাজের মানুষ। তাছাড়া রাহুল যে পদবির নাম করেছেন তাদের তরফে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেননি। ১৩ কোটির এই ছোট সম্প্রদায়ে কেউ নন, মামলকারী বিজেপির কার্যকর্তা। অদ্ভুত ব্যাপার।' এর আগে গত বুধবার রাহুল শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন, 'তাঁকে ২ বছরের কারাদণ্ডের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার উপর যেন স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। যাতে তিনি লোকসভার অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন।' তাঁর সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ শীর্ষ আদালতের নির্দেশে স্বস্তি পেলেন কংগ্রেস নেতা।
২০১৯ সালে কর্ণাটকের কোলারে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করতে গিয়ে রাহুল বলেছিলেন, 'কেন সব চোরের পদবি মোদি হয় ?' গুজরাতের বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদি তাতে রাহুলের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেন। চার বছর পুরনো সেই মামলায় রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে গুজরাতের আদালত। সাংসদ পদ বাতিল হয় রাহুলের। হাতছাড়া হয় সরকারি বাসভবনও। এর পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাত হাইকোর্টেও আবেদন জানান তিনি। দণ্ডাদেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ার আর্জি জানান। কিন্তু গুজরাত হাইকোর্টে তাঁর সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। এর পরই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন রাহুল।