নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যসভার নির্বাচন। তার আগে ব্যাপক রদবদল BJP-তে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যসভার প্রার্থী হিসেবে ২৮ জনের নাম ঘোষণা করেছে গেরুয়া শিবির, এর মধ্যে ২৪ জনই নতুন মুখ, প্রথম বার রাজ্যসভায় যাচ্ছেন, যাঁদের মধ্যে বাংলা থেকে রয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য। আগের সাংসদদের মধ্যে থেকে মাত্র চার জনকেই পুনরায় টিকিট দিচ্ছে BJP. (Rajya Sabha Elections 2024)


দেশের ১৫টি রাজ্যের ৫৬টি রাজ্যসভা আসনে নির্বাচন। এর মধ্যে ২৭টিতে BJP-র জয় একরকম নিশ্চিত। পাশাপাশি, ওড়িশার BJD-র সহযোগিতায় আরও একটি আসন কার্যত বাঁধা। রাজ্যসভায় পুনরায় যে চার জনকে টিকিট দিচ্ছে BJP, তার মধ্যে রয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। হিমাচলপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ তিনি। এবার গুজরাত থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব BJD-র সমর্থনে ওড়িশা থেকে প্রার্থী হলেন তিনি। (BJP Rajya Sabha Candidates)



এর পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এল মুরুগান মধ্যপ্রদেশ থেকে আবারও রাজ্যসভায় যাচ্ছেন। বিজেপি-র মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদীও উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভায় যাচ্ছেন আবারও। আগেই তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। 


আরও পড়ুন: Electoral Bonds: সবচেয়ে বেশি লাভবান BJP-ই, যে কারণে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিতর্ক গোড়া থেকে...


আগেই যদিও এই রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিল BJP. রাজ্যসভায় একাধিক মেয়াদ পূর্ণ করেছেন যাঁরা, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর পরই বুধবার রাজ্যসভা নির্বাচনের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় নাম নেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব, ধর্মেন্দ্র প্রধান, মনসুখ মাণ্ডবীয়, নারায়ণ রানে, পুরুষোত্তম রুপালা, ভি মুরলিধরন, রাজীব চন্দ্রশেখরদের। সংসদে জায়গা পেতে তাঁদের লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াতে হতে পারে। নয়ত বা দলের সংগঠনের কাজে লাগানো হতে পারে তাঁদের।


রাজ্যসভার সাংসদ যাঁরা পুনরায় টিকিট পাননি, সেই তালিকায় রয়েছেন বিজেপি-র জাতীয় মিডিয়া হেড অনিল বালুনি, বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সরোজ পাণ্ডে, বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদি। এর আগে, অগাস্ট মাসে NDA সাংসদদের উদ্দেশ বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, রাজ্যসভা সাংসদদের একবার অন্তত লোকসভা নির্বাচনে নাম লেখানো উচিত। নির্বাচনের উত্তাপ তবেই অনুভব করতে পারবেন তাঁরা। 


এই রদবদলের নেপথ্যে বৃহত্তর লক্ষ্য রয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, ওড়িশায় নবীন পট্টনায়েকের বিকল্প হয়ে উঠতে চায় BJP. কেরলেও দীর্ঘ দিন ধরে দাঁত ফোটানোর চেষ্টা চলছে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ভাবে শিক্ষিত, সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নতুন মুখদের সামনে আনতে আগ্রহী দল। গুজরাতে এখনও পর্যন্ত মোদি এবং অমিত শাহই জাতীয় শেষ কথা। তাঁদের বিকল্প হিসেবে যোগ্য মুখ তৈরি করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। একই ভাবে, রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে, হরিয়ানায় মনোহরলাল খট্টারের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আলাদা পরিচিতি গড়ে তোলার লক্ষ্য গৃহীত হয়েছে। যে কারণে কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের লোকসভা নির্বাচন থেকে বাদ রাখা হয়েছে আপাতত, যাে মন্ত্রকের কাজে বাধা সৃষ্টি না হয়। তাই রাজ্যসভাতেই রাখা হচ্ছে বৈষ্ণবকে, যিনি রেল এবং তথ্য-প্রযুক্তির দায়িত্বে রয়েছেন। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।


যে ২৮ জনকে রাজ্যসভার প্রার্থী করা হয়েছে এবার, তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন মহিলা। জাতপাতের ভারসাম্যও রাখা হয়েছে। তাই রাজ্যসভার প্রার্থিতালিকার এই রদবদল আগামী দিনে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থিতালিকার পথ নির্দেশ করবে বলেও মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। এবছর লোকসভায় দলকে ৩৭০ আসনের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন মোদি। সেই লক্ষ্যপূরণে লোকসভাতেও একাধিক নতুন মুখকে তুলে আনা হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।