নয়াদিল্লি: আগের লোকসভা নির্বাচনে বার বার উঠে এসেছিল পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ (Pulwama Terror Attack)। তাকে সামনে রেখেই বিজেপি (BJP) নির্বাচনী সুফল ঘরে তুলেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগে ফের আলোচনার কেন্দ্রে পুলওয়ামা হামলা। জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা সত্যপাল মালিক (Satya Pal Malik) এ বার পুলওয়ামা প্রশ্নে কাঠগড়ায় তুললেন নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। তিনি জানিয়েছেন, সুবিশাল কনভয় নিয়ে এগোতে CRPF-এর তরফে বিমান চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। তাতেই রাস্তা ধরে এগোতে বাধ্য হন ভারতীয় জওয়ানরা এবং শেষ মেশ সন্ত্রাস হামলায় প্রাণ হারাতে হয় তাঁদের।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে এই বিস্ফোরক দাবি করেছেন সত্যপাল। তাঁর মতে জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিরাপত্তজনিত গলদের জেরেই পুলওয়ামায় জওয়ানদের প্রাণ হারাতে হয় বলে দাবি করেছেন তিনি। এমনকি এ নিয়ে কথা বলতে গেলে মোদি তাঁকে চেপে যেতে বলেন বলেও দাবি করেছেন। সত্যপালের এই মন্তব্য সামনে আসতেই ফের সরব হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি। নতুন করে পুলওয়ামা হামলা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলতে শুরু করেছে তারা। শনিবার সেই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেসে। কেন CRPF-কে হেলিকপ্টার দেওয়া হল না, আগের তদন্তের কী হল, তা নিয়ে জবাব চেয়েছে তারা।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, “ন্যূনতম প্রশাসন এবং অধিকতম নীরবতা, এই হচ্ছে বিজেপি-র নীতি। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল যে অভিযোগ তুলেছেন, তার জবাব দিতে হবে মোদি সরকারকে।” জয়রামের মতে, কথায় কথায় জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দেয় কেন্দ্র। পুলওয়ামা হামলাও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িয়ে। তাই প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে পারে না কংগ্রেস। কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাথ আবার বলেন, “CRPF-কে বিমান দেওয়া হল না কেন? জইশ-ই-মহম্মদকে ঘিরে সতর্কবার্তা থাকলেও, কেন ধর্তব্যের মধ্যে আনা হল না বিষয়টি? ২ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১১ বার গোয়েন্দারা হামলা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তার পরও কেন গুরুত্ব পেল না বিষয়টি?”
স্বভাবতই এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র কংগ্রেস নয়, উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টিও কেন্দ্রের কাছে জবাব চাইতে শুরু করেছে। উদ্ধব অনুগামী সঞ্জয় রাউত বলেন, “বিরোধী শিবিরের নেতারা যখন পুলওয়ামা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন, দেশদ্রোহী বলে চুপ করিয়ে দিচ্ছিল বিজেপি। এখন কী বলবে?” পুলওয়ামা হামলার ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে বলে দাবি তুলেছে সমাজবাদী পার্টি। যদিও বরাবরের মতোই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর দাবি, বার বার নিজের অবস্থান পাল্টেছেন সত্যপাল। কখনও রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন। কখনও আবার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রের। তাঁর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে নাচানাচির কোনও কারণ নেই। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলওয়ামা প্রশ্ন থেকে সরতে নারাজ বিরোধীরা।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলা চালায় এক আত্মঘাতী জঙ্গি। তাতে ৪০-এর বেশি CRPF জওয়ানের মৃত্যু হয়। তার পর বালাকোটে অভিযান চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। সেই নিয়ে তেতে উঠেছিল সে বারের লোকসভা নির্বাচন। পুলওয়ামায় নিরাপত্তাজনিত গাফিলতির প্রশ্ন উঠলে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করে বিজেপি। আবার বিরোধীরা দাবি করে যে, পুলওয়ামা এবং বালাকোটকে ভোটবাক্স ভরার কাজে ব্যবহার করেছেন মোদি।