পুনে: ভারতের বাইরে অন্য দেশেও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির কথা ভাবছে পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। দেশের মধ্যে টিকার উৎপাদন সীমিত। বর্তমানে চাহিদা যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন সিরামের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার আদর পুনাওয়ালা। উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার গবেষণালব্ধ করোনার টিকা তৈরি করছে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট।


সর্বভারতীয় একটি সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, "আর কয়েকদিনের মধ্যেই এই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।" কিছুদিন আগেই আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছিলেন, "দেশের একাধিক রাজ্যেই কোভিড-১৯-এর টিকা শেষ। আশা করা যাচ্ছে জুলাই-এর মধ্যে মাসিক আউটপুট হিসেবে ১০০ মিলিয়ন টিকার ডোজ তৈরি করে সরবরাহে সক্ষম হবে সিরাম।"  


উল্লেখ্য, সম্প্রতি লন্ডন থেকে ঘুরে এসেছেন সিরাম প্রধান এবং সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, "আগামী ৬ মাসের মধ্যেই ২.৫ বিলিয়ন উৎপাদনকে ৩ বিলিয়নে পৌঁছতে সক্ষম হবে সিরাম ইনস্টিটিউট। 


ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে সিরাম ইনস্টিটিউট সংস্থার প্রধান আদর পুনাওয়ালা এও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভারতের জন্য এত বিপুল পরিমাণে করোনার টিকা কোভিশিল্ড উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে‌। এই টিকা নিয়ে সিরাম সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে কেন্দ্র। জোগানের ঘাটতি কমাতে সম্প্রতি কোভিশিল্ড বিদেশে রফতানিও বন্ধ করা হয়েছে। এবার টিকার চাহিদার কথা মাথায় রেখেই দেশের বাইরে অন্যত্র কোভিড টিকা উৎপাদন শুরু করার কথা ভাবছে সিরাম।


উল্লেখ্য, ভ্যাকসিন সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই বলবৎ হয়েছে ইতিমধ্যেই। সমালোচনার মুখে পড়ে কোভিশিল্ডের দাম কমিয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। জানানো হয়েছে, ৪০০ টাকার বদলে ৩০০ টাকায় কিনবে রাজ্য সরকার। অবশ্য খোলা বাজারে ৬০০ টাকাতেই কিনতে হবে কোভিশিল্ড। ২৮ এপ্রিল কোভিডিল্ডের আরও ১০ লক্ষ ডোজ এসেছে কলকাতায়। ১০ লক্ষ ডোজের মধ্যে ৪ লক্ষ ডোজ পেয়েছে রাজ্য। 


বাকি ৬ লক্ষ ডোজ হেস্টিংসের সেন্ট্রাল স্টোরে রাখা থাকবে। পরে তা অন্যান্য রাজ্যে পাঠানো হবে। রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে যা চাহিদা রয়েছে তার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। সীমিত সংখ্যার ভ্যাকসিন পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় প্রতিদিন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।


আজ শনিবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে দৈনিক আক্রান্তর সংখ্যা চার লক্ষ ছুঁয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা ৪,০১,৯৯৩। মৃত্যু হয়েছে ৩,৫২৩ জনের। হিসেব বলছে ভারতই বিশ্বের প্রথম দেশ যেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ছাড়ালো।


বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। অক্সিজেনের হাহাকার, হাসপাতালে বেডের অপ্রতুলতায় প্রতিদিনই স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে ওষুধ এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সামগ্রী রফতানিতে বাধ্য হয়েছে দেশ।


এই পরিস্থিতিতে আশার আলোও দেখাতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। বরং তাঁরা বলছেন আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছে যাবে দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে যখনই দৈনিক সংক্রমণ ১০,০০০ ছুঁয়েছিল, তখনই রাশ টানা উচিৎ ছিল। রাজনৈতিক জমায়েত, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির কারণেই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।