কলকাতা: এই জীবনের 'সকলই আঁধার' যদি না দৃষ্টিশক্তি অক্ষুণ্ণ থাকে। রোগের থাবায় সেই দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসা মানুষগুলো যাতে স্রেফ অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন, সেই জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে চেন্নাইয়ের 'শঙ্কর নেত্রালয়' তৈরি করেছিলেন চক্ষু চিকিৎসক এস এস বদ্রীনাথ। আজ প্রয়াণ হল তাঁর। ৮৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন 'শঙ্কর নেত্রালয়'-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক এস এস বদ্রীনাথ (Shankar Netralaya Chennai Founder Doctor SS Badrinath Passes Away)।


ফিরে দেখা...
দেশ তখনও পরাধীন। তবে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঝাঁঝ তুঙ্গে। সাল ১৯৪০। তারিখটা ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। চেন্নাইয়ের ত্রিপলিকানে, সরকারি চাকুরিজীবী এক ইঞ্জিনিয়ারের ঘরে জন্ম নিলেন সেঙ্গামারু শ্রীনিবাসা বদ্রীনাথ। বংশলতিকা বলছে, মা লক্ষ্মী দেবী ছিলেন সে সময়কার, চেন্নাইয়ের বিখ্যাত আইনজীবীর মেয়ে। আর বাবা, এসভি শ্রীনিবাস রাও, কাজ করতেন তৎকালীন মাদ্রাজ সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস এবং ফুড ডিপার্টমেন্টের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সাত ভাই-বোনের সবচেয়ে ছোট ছিলেন বদ্রীনাথ। আদুরে হলেও জীবনের সঙ্গে লড়াই শুরু কৈশোর থেকে কারণ কৈশোরে মা-বাবা দু'জনকেই হারান তিনি।


প্রতিবন্ধকতা...
শৈশবে অসুস্থতার জন্য লেখাপড়া শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। ৭ বছর বয়সে প্রথাগত পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। সম্ভবত তখন থেকেই সংগ্রাম শুরু। কৈশোরে মা-বাবাকে হারিয়ে পায়ের তলার জমি শক্তি করার লড়াই আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে মাইলাপোরের পিএস হাইস্কুল, তার পর চেন্নাইয়ের রামকৃষ্ণ মিশন হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। তার পর মাদ্রাজের লয়োলা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়েন। বাবার মৃত্যুর পর বিমার যে টাকা পেয়েছিলেন, সেই নিয়েই ডাক্তারি পড়ার খরচ চালিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন বদ্রীনাথ। এর পর সোজা মার্কিন মুলুকে চলে যান। সেখানে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গ্রাসল্যান্ডস হসপিটালও তার পর ব্রুকলিন আই অ্যান্ড ইয়ার ইনফারমারি মিলিয়ে স্নাতকোত্তর। ১৯৬৮ সালের মধ্যে সেই লেখাপড়া শেষ হয় তাঁর। 


মুকুটে পালক...
চোখের চিকিৎসা নিয়ে স্নাতকোত্তরের পর থেকে একের পর এক সাফল্যের পালক জুড়তে থাকে তাঁর মুকুটে। ১৯৬৯ সালে কানাডার 'ফেলো অফ দ্য রয়্যাল কলেজ অফ সার্জেনস' -র প্রবেশিকা পাশ করেন। ১৯৭০ সালে আমেরিকান বোর্ড এগজ্যামিনেশন ইন অপথ্যালমোলজির বেড়া ডিঙোন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল, এর মধ্যে চেন্নাইয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সব সময় ভাবতেন, কী ভাবে দুঃস্থ ভারতীয়দেরও চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। সেই ভাবনা থেকেই ১৯৭৮ সালে চেন্নাইয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের যে অংশে হাসপাতাল-পরিষেবা শুরু হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছিল শঙ্কর নেত্রালয়। আজ সারা ভারতে চক্ষু চিকিৎসায় অন্যতম সেরা এই প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৯ সালে ভারত সরকার, 'শঙ্কর নেত্রালয়'-র মতো সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে থাকা চক্ষু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য  ডক্টর এসএস বদ্রীনাথকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে নতুন চক্ষু চিকিৎসক-অপ্টোমেট্রিস্ট-প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের ইন্টার্নশিপেরও ব্যবস্থা করা হয়। আজ ডক্টর এসএস বদ্রীনাথের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।


  আরও পড়ুন:৪০০০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ, Amway-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপে তৎপর ED