নয়াদিল্লি: বয়স ৮০ পেরোলেও জাতীয় রাজনীতিতে এখনও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তিনি। সেই শরদ পওয়ারই এবার নির্বাচনী রাজনীতি থেকে সন্ন্যাসগ্রহণের ইঙ্গিত দিলেন। রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মেয়াদ শেষ হতে আর ১৮ মাস বাকি। এবার রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হলে আর কোনও নির্বাচনে তিনি অংশ না নিতেও পারেন বলে জানালেন নিজেই।  তাই ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (NCP) উত্তরাধিকার কার হাতে উঠবে, শরদের এই ঘোষণায় সেই নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। (Sharad Pawar)


কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ১৯৯৯ সালে NCP-র সূচনা করেন শরদ। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে 'Grand Old Man' হিসেবে স্বীকৃত তিনি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে 'মহা আঘাডি জোটে'র রণকৌশল রচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন শরদ। কিন্তু সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের বরামতী, যা পওয়ারদের নির্বাচনী ভূমি হিসেবে পরিচিত, সেখান থেকেই রাজনীতি থেকে সন্ন্যাসের ইঙ্গিত দিলেন শরদ। (Sharad Pawar Retirement)


আগামী ২০ নভেম্বর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন, তার আগে শরদকে বলতে শোনা যায়, "আমি ক্ষমতায় নেই। রাজ্যসভাতেও আমার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। আর দেড় বছরের মতো বাকি। এর পর ভবিষ্যতে আর কোনও নির্বাচনে লড়ব না আমি। কোথাও না কোথাও গিয়ে আমাকে থামতে তো হবেই।" সবমিলিয়ে ১৪ বার সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচিত করার জন্য বরামতীর মানুষকে ধন্যবাদও জানান শরদ। অবসরের দিকেই যদি এগোন সরদ, সেক্ষেত্রে দীর্ঘ ছ'দশকের রাজনৈতিক জীবনে ইতি টানবেন তিনি। 


যে বরামতীক মাটিতে দাঁড়িয়ে অবসরের ইঙ্গিত দিলেন, তা পওয়ারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে NCP (শরদ পওয়ার নেতৃত্বাধীন) থেকে প্রার্থী হয়েছেন শরদের প্রপৌত্র যুগেন্দ্র পওয়ার। শরদের হাত ছেড়ে পৃথক NCP (অজিত পওয়ার নেতৃত্বাধীন) নিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে জোট গড়া অজিত পওয়ারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন যুগেন্দ্র। অজিত শরদের ভ্রাতুষ্পুত্র, যিনি শরদের উত্তরাধিকারী বলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, যাঁর জন্যই শেষ পর্যন্ত দু'-টুকরো হয়ে যায় NCP.


পাঁচ-পাঁচ বার বরামতী থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন অজিত। কিন্তু এতদিন শরদের ছত্রছায়ায় থেকেই পারিবারিক কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন তিনি। এই প্রথম সেখানে একার ক্ষমতায় লড়াই করছেন তিনি। সেই আবহে এই নির্বাচন শরদের জন্যও একরকম ভাবে পরীক্ষার। বরামতীতে নির্বাচনের ফলাফল কোন দিকে যায়, তার উপর শরদের উত্তরাধিকার শুধু নির্ভর করছে না, মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমীকরণও অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।


বছরের শুরুতে বরামতী থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। অজিতের সমালোচনা না করলেও, সেখানে দাঁড়িয়ে শরদ বলেন, "ওর (অজিত) বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই আমার। প্রায় ৩০ বছর আপনাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এখন সময় হয়েছে তরুণদের নেতৃত্বে তুলে আনার, যারা আগামী ৩০ বছর আপনাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। আপনাদের ভোট চাইছি না। কিন্তু ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের।"


রাজনীতি থেকে শরদের অবসর নিয়ে জল্পনা যদিও এই প্রথম নয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খোদ অজিত সেই নিয়ে মুখ খোলেন। একটা বয়সের পর সকলের দায়িত্ব ছাড়া উচিত বলে মন্তব্য করেন অজিত। বয়স ৮০ পেরিয়ে গেলেও কেউ কেউ অবসর নিতে রাজি নন বলে কটাক্ষ করেন। সেই সময় জবাব দিতে গিয়ে শরদ বলেছিলেন, "না আমি ক্লান্ত, না অবসরপ্রাপ্ত (না টায়ার্ড হুঁ, না রিটার্য়ার্ড হুঁ)"। গতবছর দল যখন ঘোর সঙ্কটে, সেই সময়ই দলের নেতৃত্ব থেকে ইস্তফার ঘোষণা করেন। কিন্তু তাঁর সেই ইস্তফা খারিজ হয়ে যায় দলের অন্দরে। বাধ্য হয়ে ইস্তফাপত্র তুলে নেন শরদ। এবার নিজেই জানালেন, আর নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। শরদের জায়গায় মেয়ে সুপ্রিয়া দলের রাশভার গ্রহণ করবেন, না কি অন্য কারও হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে, সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে।