নয়াদিল্লি: সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে দেশ যখন অগ্নিগর্ভ, বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে ভারতে নিরাপদ আশ্রয়েই রয়েছেন তিনি। সেই থেকে নয় নয় করে ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও, বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনাকে নিয়ে টানাপোড়েন চলছেই। হাসিনাকে গ্রেফতার করতে সরাসরি ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু গত ১০০ দিন ধরে ভারতে কেমন আছেন হাসিনা? কী করছেন তিনি? সেই নিয়েও কম আগ্রহ নেই। (Sheikh Hasina)


গত ৫ অগাস্ট ঢাকা থেকে সরাসরি গাজিয়াবাদে বায়ুসেনার হিন্ডন ঘাঁটিতে এসে অবতরণ করেন হাসিনা। বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি লিগের নেত্রী হাসিনা এই মুহূর্তে দিল্লিতে, নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে একটি বাংলোয়র বন্দোবস্ত করা হয়েছে তাঁর জন্য। ওই এলাকায় মন্ত্রী, সাংসদরা থাকেন। কোনও দেশের রাষ্ট্রনেতার সমান সম্মান এবং নিরাপত্তা পাচ্ছেন হাসিনা। (Sheikh Hasina in Banglades)


সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাসিনার নিরাপত্তায় ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড (NSG)-এর কম্যান্ডোরা মোতায়েন রয়েছেন। হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে যখন ছিলেন হাসিনা, সেখানে তাঁর নিরাপত্তায় মোতায়েন ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার Elite Garud কম্যান্ডোরা। দু'দুনি পরই সেখান থেকে দিল্লির বাংলোয় সরিয়ে আনা হয় তাঁকে। 


হাসিনার কন্যা সাইমা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত (WHO)। WHO-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের আঞ্চলিক ডিরেক্টরও পুতুল। দিল্লিতে WHO-র সদর দফতরের দায়িত্ব পান এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই। হাসিনার কাছে মেয়ের যাতায়াত রয়েছে বলে খবর। এমনকি দিল্লির লোঝি গার্ডেনে নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে হাসিনাকে হাঁটতে বেরোতেও দেখা যায় বলে জানা যায়। ২৪ ঘণ্টা তাঁর সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। 


ঠিক কতদিন ভারতে থাকবেন হাসিনা, তা নিয়ে এখনও ধন্দ রয়েছে। হাসিনা ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন বলেও মাঝে খবর আসে। কিন্তু সেই নিয়ে মাঝে জোর আলোচনা হলেও, বর্তমানে অন্যত্র হাসিনা আশ্রয় চাইছেন বলে খবর নেই। হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য যদিও ভারতের উপর ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং নাগরিকদের একাংশ। ভারত বরাবরই হাসিনাকে বাঁচিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের। 


গত ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। মানবতার বিরুদ্ধে হাসিনা অপরাধ ঘটিয়েছেন বলে মন্তব্য করে আদালত। গত ১০ নভেম্বর ইউনূস সরকার জানায়, হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সাহায্য নেবে তারা। ১২ নভেম্বর সেই মতো আবেদনও জানানো হয়।


সেই আবহেই বাংলাদেশে হাসিনার সমর্থনে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বার জয়ী হওয়াকেও উদ্বেগ বেড়েছে ইউনূস সরকারের। হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে আগেই ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে হাসিনাকে নিয়ে তাদের অবস্থান পাল্টাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। তবে হাসিনা কতদিন দিল্লিতে থাকবেন, তা এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট ভাবে জানা নেই। 


দিল্লিতে যদিও বারবরই আনাগোনা হাসিনার। ১৯৭৫ সালে যখন বাবা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরিবারের সদস্যরা খুন হন, সেই সময়ও দিল্লিতেই ছিলেন হাসিনা এবং তাঁর বোন রেহানা, যে কারণে প্রাণে বেঁচে যান তাঁরা। দিল্লির পান্ডারা রোডে প্রায় ছ'বছর স্বামী, সন্তান এবং বোনকে নিয়ে ছিলেন হাসিনা, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১। দিল্লি থেকে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েই নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারের সূচনা করেন।  বিপদের সময় আশ্রয় জোগানোর জন্য ভারতকে বার বার ধন্যবাদও জানান হাসিনা। এত বছর পর আবারও ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।