গুয়াহাটি: লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে নাজেহাল অবস্থা ছিলই। মেঘভাঙা বৃষ্টি কার্যত ধ্বংস করে দিল সিকিমকে। এখনও পর্যন্ত সেখানে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এখনও নিখোঁজ ১০২ জন। এর মধ্যে ২৩ জন সেনাকর্মীও গতকাল নিখোঁজ হয়ে যান, তাঁদের মধ্যে একজনের খোঁজ মিলেছে বলে খবর (Sikkim Flood)। উত্তরের লোনাক হ্রদের উপর মেঘভাঙা বৃষ্টি আছড়ে পড়াতেই পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে ওঠে। তিস্তা নদী উপচে পড়ছে এই মুহূর্তে। হড়পা বানের প্রকোপও নেমে এসেছে। রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১৪টি সেতু ভেঙে পড়েছে সিকিমে। বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন প্রায় ৩০০০ পর্যটক। (Sikkim Flood Situation)


বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টি আছড়ে পড়ে সিকিমে। জলের তোড়ে ভেসে যায় চুংথাং বাঁধ, যা কিনা সিকিমের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। তাতেই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে সিকিম সরকার বর্তমান পরিস্থিতিকে বিপর্যয় বলে ঘোষণা করেছে। এর মধ্য়েই একটি মাত্র ভাল খবর সামনে এসেছে। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, সিংতামের কাছে বরদাং থেকে ২৩ জন সৈনিকের খোঁজ মিলছিল না। তাঁদের মধ্যে একজনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। প্রত্যেকের অবস্থা স্থিতিশীল।


সিকিম সরকারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ১০ জনের মৃত্যুর খবর একেবারে সঠিক। মৃত্যুসংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রায় ১০০ জন এখনও নিখোঁজ। তিনি বলেন, "জলের তোড়ে ১৪টি সেতু ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে ন'টি ছিল বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের অধীনে, পাঁচটি রাজ্য সরকারের। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন প্রায় ৩০০০ পর্যটক।"


আরও পড়ুন: Sikkim Cloudburst: সিকিমে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বানভাসি রাস্তাঘাট, কোথায় কোন রাস্তা বন্ধ, কোন পথই বা খোলা?


পুুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চুংথাংয়ে তিস্তা স্টেজ-৩ বাঁধে ১৪ জন শ্রমির কাজ করছিলেন। বাঁধ ভেঙে পড়ের পর এখনও সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত আহত হয়েছেন যাঁরা, যাঁদের খোঁজ মিলছে না, তাঁরা মূলতচ চুংথাংয়ের মাংনান, দিকচু, সিংতাম, রংপোর বাসিন্দা। উদ্ধার করে আহত অবস্থায় ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


বিপর্যয়ের জেরে এই মুহূর্তে সিকিমের চুংথাং এবং উত্তরে বিস্তীর্ণ অংশে মোবাইল নেটওয়র্ক এবং ব্রডব্যান্ড সংযোগ কাজ করছে না।  সাংকালান এবং তুংয়ে হড়পা বানের ফলে ফাইবার কেবিল নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে খবর। চুংথাংয়ের একটি থানাও ভেঙে পড়েছে। বুধবার সেখানে উদ্ধারকার্যে নামে ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি বাহিনী। ২৩ জন সৈনিকের মধ্যে একজনকে তারাই উদ্ধার করে। তাঁর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। 


রাজ্য সরকারের তরফে অতিরিক্ত বাহিনী চাওয়া হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কাছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অনুমোদনও মিলেছে তাতে। ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে সামগ্রী আনতে অস্থায়ী সেতু বানানোর কাজে নামছে সেনা এবং ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড। সিংতাং, রংপো, দিকচু, আদর্শ গাঁওয়ে ১৮টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।