কলকাতা: টিটাগড় এবং হাওড়া, দুই জায়গায়, পরপর দু’দিনে, ভর সন্ধেয়, থানার অদূরে দু’টি খুনের ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নের মুখে। অথচ এই সময়েই জানা যাচ্ছে, এ রাজ্যের অপরাধের পরিসংখ্যান কেন্দ্রকে পাঠাচ্ছেই না তৃণমূল সরকার।


রাজ্যের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে, গোটা দেশের অপরাধের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো অথবা এনসিআরবি। কিন্তু, ২০১৯ সালের যে পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য নেই। এনসিআরবি-র বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের কাছ থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই ২০১৮ সালের পুরনো তথ্যই এবারের রিপোর্টেও দেওয়া হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে বিরোধীদের প্রশ্ন, উত্তরপ্রদেশে ধর্ষণ কিংবা মহিলাদের ওপর অত্যাচার নিয়ে যে তৃণমূল সরব হয়, তারা কি বাংলার আসল ছবিটা লুকোতেই কেন্দ্রকে অপরাধ সংক্রান্ত কোনও তথ্য দেয় না? সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ি যেমন বলছেন, এ রাজ্যে এত খুন, ধর্ষণ ঘটছে যে পাঠানোর জায়গা নেই। আবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী হাথরস নিয়ে হাঁটছেন, অথচ এ রাজ্যের অপরাধের পরিসংখ্যান এত লজ্জার, যে  তা না পাঠিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

যদিও, এনসিআরবি-তে তথ্য না পাঠানোর বিষয়টিকে গুরুত্বই দিচ্ছে না তৃণমূল। সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, এনসিআরবি কোনও সাংবিধানিক সংস্থা নয় তাই এদের তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

এদিকে রাজ্য প্রশাসনের আবার দাবি, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সব তথ্য পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে। কিন্তু তা নথিভুক্ত করা হয়নি।

এরই মধ্যে রাজ্যপালও ময়দানে নেমে পড়েছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছরের অগাস্ট মাসে পশ্চিমবঙ্গে ২২৩টি ধর্ষণ এবং ৬৩৯টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সরকারি রিপোর্টে রাজ্যে নারী নির্যাতনের যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। এরপর জেলা ধরে ধরে ধর্ষণ ও অপহরণের পরিসংখ্যানও দেন রাজ্যপাল।


রাজ্যপালের টুইটের পাল্টা স্বরাষ্ট্র দফতর টুইট করে দাবি করে, পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ ও অপহরণ নিয়ে রাজভবনের তরফে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা কোনও সরকারি রিপোর্ট বা তথ্যের ভিত্তিতে নয়। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর এবং আসল তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।


স্বরাষ্ট্র দফতর এই টুইট করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফের টুইট করে রাজ্যপাল বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভয়াবহ ভুল ব্যাখ্যায় আমি স্তম্ভিত। তাদের এখনই ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার এবং তা সংশোধন করা উচিত। বিভিন্ন ডিভিশন থেকে সরকারিভাবে আমার কাছে যে পরিসংখ্যান পাঠানো হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই অগাস্টে ২২৩টি ধর্ষণ এবং ৬৩৯টি অপহরণের তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি তথ্য দেওয়া হয়েছে খুঁটিয়ে দেখার পর।


এরপর ফের টুইট করে মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে অবিলম্বে ভুল সংশোধন করতে বলেন তিনি।