দীপক ঘোষ ও মনোজ্ঞা লহিয়াল, কলকাতা: পিএসি বিতর্কে এবার রাজ্য বিধানসভার সব'কটি স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে ইস্তফা দিলেন বিজেপির বিধায়করা। দলীয় সূত্রে খবর, মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান করার প্রতিবাদেই এই সিদ্ধান্ত।
বিধানসভার ৮টি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্য়ানের পদে আসীন ছিলেন বিজেপি বিধায়করা। মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান করার প্রতিবাদে সমস্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে ইস্তফা দিলেন ৮ বিজেপি বিধায়কই।
পদত্যাগ করলেন বিজেপির মিহির গোস্বামী, মনোজ টিগ্গা, কৃষ্ণ কল্যাণী, নিখিলরঞ্জন দে, বিষ্ণুপদ শর্মা, দীপক বর্মণ, অশোক কীর্তনিয়া ও আনন্দময় বর্মণ। এরপরেই শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে রাজভবন যান বিজেপি বিধায়করা।
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার পরই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মুকুল রায়। যদিও, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, বিরোধী বিধায়ক হিসেবেই তাঁকে এই পদ দেওয়া হয়েছে।
১১ জুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন মুকুল রায়। তৃণমূলনেত্রী সেদিন বলেছিলেন, মুকুল আমাদের পুরনো পরিবারের ছেলে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল।
দু’সপ্তাহ পর অর্থাৎ গত ২৪ তারিখ মুকুল রায়ের পিএসি-র চেয়ারম্যান হওয়ার জল্পনা মাথাচাড়া দিতেই, মমতা জানিয়ে দেন, মুকুল রায় বিজেপির পার্টি মেম্বার।
দলবদলের পরও বিধানসভায় বিজেপির বেঞ্চে বসায় মুকুল রায়কে কটাক্ষ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দিলীপ ঘোষ বলেন, মুকুল রায়ের মতো একজন নেতা, যিনি বিজেপির হয়ে জিতলেন। তারপর প্রকাশ্যে তৃণমূলে যোগ দিলেন। এখন নির্লজ্জের মতো আমাদের বেঞ্চে বসে আছেন। সিএসি চেয়ারম্যান হবেন বলে কি উনি ত্রিশঙ্কু হয়ে গেলেন?
এ প্রসঙ্গে অনেকেই মানস ভুঁইয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। যিনি ২০১৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন। তারপর তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জল্পনার মাঝে মানস ভুঁইয়াকে পিএসি চেয়ারম্যান করা হয়। কংগ্রেসের আপত্তি সত্ত্বেও মানস ভুঁইয়া সেই পদ গ্রহণ করেন। এবং কিছুদিন পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন।
বিজেপি অবশ্য দাবি করছে, অতীতে মানস ভুঁইয়াকে পিএসি চেয়ারম্যান করার সঙ্গে মুকুল রায়ের তুলনা চলে না। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, মানস ভুঁইয়াকে মনোনীত করেছিলেন কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের ছ’টা কোটা থেকে। মানস তৎকালীন সময়ে দলবদল করেননি। মুকুল তৃণমলের সভানেত্রীর উপস্থিতিতে গলায় উত্তরীয় পড়ে, যোগ দিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলের সমালোচনার পাশাপাশি তৃণমূলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীকেও পুরনো কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বামেরা।
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, এ রাজ্যের শাসক দল কোনও সংসদীয় প্রথা মানে না। আর শুভেন্দু তো তখন ওই সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, তিনিও তো তখন এই অনৈতিক কাজের কোনও প্রতিবাদ করেননি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, আমি ভারতবর্ষের পিএসির চেয়ারম্যান। বিরোধীদের চেয়ারম্যান করাটাই রেওয়াজ। এটা ইন্দিরা গাঁধী চালু করেছিলেন। সব রাজ্যে এটাই হয়।