স্থানীয় সূত্রে খবর, নিহত মাছিভাঙার বাসিন্দা হাফিজুল মোল্লা পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে শুক্রবার যে মিছিল বেরিয়েছিল, তার সামনের সারিতে ছিলেন তিনি। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন আরাবুল, তাঁর ছেলে হাকিমুল ও ভাই খুদে। আরাবুলের নির্দেশেই বোমা-গুলি নিয়ে হামলা হয় মিছিলে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, আরাবুলের লোকজনই যে এই হামলা চালিয়েছে, পুলিশের কাছেও সেই খবর আসে। এরপরই নবান্নর তরফে আরাবুল ও এই ঘটনায় অভিযুক্ত তাঁর সঙ্গীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রশাসনের শীর্ষস্তরের বার্তা পাওয়া মাত্রই তৎপর হয় পুলিশ। স্পেশাল অপারেশন গ্রুপকে নিয়ে ভাঙড়ের উদ্দেশে রওনা দেন বারুইপুরের পুলিশ সুপার। অভিযানে সামিল হন লাগোয়া এলাকার সমস্ত থানার আধিকারিকরা। আরাবুল যাতে পালাতে না পারেন সে জন্য চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় ভাঙড়কে। শুরু হয় নাকা তল্লাশি। গাজিপুরে আরাবুলের বাড়িতেও পৌঁছয় পুলিশ। কিন্তু সেখানেও পাওয়া যায়নি তাঁকে।
পুলিশ বুঝে যায়, অভিযানের আশঙ্কাতেই গা ঢাকা দিয়েছেন আরাবুল। কিন্তু পুলিশকর্তারা একটা বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, পরিচিত মুখ হওয়ায়, বেশি আস্তানা বদলের ঝুঁকি নেবেন না দাপুটে এই তৃণমূল নেতা। তাই আরাবুলের বাড়ির সামনে অপেক্ষা করতে থাকে বাহিনী। ওদিকে আরাবুলের গ্রেফতারির দাবিতে মাছিভাঙা তখন উত্তাল। মৃতদেহ নিয়ে এলাকায় মশাল মিছিল বের করেন গ্রামবাসীরা। আরাবুল-সহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে হাড়োয়া রোড অবরোধ করেন তাঁরা। বিভিন্ন রাস্তায় জ্বলে প্রতিবাদের আগুন।
এরপর আরাবুলকে ধরতে প্রযুক্তির সাহায্য নেন পুলিশকর্তারা। তাতেই জানা যায়, আরাবুলের অবস্থান। সূত্রের খবর, এরপর রাত সাড়ে দশটা নাগাদ, বাড়ির পিছনে মাঠ লাগোয়া একটি জঙ্গল থেকে গ্রেফতার করা হয় আরাবুল ও তাঁর এক সহযোগীকে।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, আরাবুলের নির্দেশে গুলি চালান তাঁর ভাই খুদে। তাতেই গুরুতর জখম হন নির্দল প্রার্থীর সমর্থক হাফিজুল। রাজারহাটের হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মাত্র ছ’মাস আগে বিয়ে হয়েছিল পেশায় দর্জি হাফিজুলের। তাঁর মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার।
এই ঘটনায় পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। খুনের প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে মৌলালি মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করবে ভাঙড় আন্দোলন সংহতি কমিটি। ঘটনার নিন্দা করে সব দোষীর গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।