কলকাতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাশাপাশি শান্তিনিকেতনে জন্মানো আরেক কৃতী বাঙালিকে নিয়েও শুরু হয়েছে তরজা।
তিনি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। যাঁর নাম রেখেছিলেন কবিগুরুই। বিশ্বভারতীর জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের জট রয়েছে। সম্প্রতি একটি মহল থেকে দাবি করা হয়, অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমির কিছুটা অংশ বিশ্বভারতীর এক্তিয়ারভুক্ত।
বৃহস্পতিবার এনিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, আপনারা কি বিশ্বাস করেন, অমর্ত্য সেনের এমন কোনও দিনও আসবে, যে তাঁকে শান্তিনিকেতনে জমি দখল করতে হবে! অমর্ত্য সেন আদর্শগত ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে বলে তাঁর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে, এটা বাংলার মানুষ সহ্য করবে না। আমি বাংলার হয়ে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা করবেন অমর্ত্যদা, আপনাদের মতো মানুষকেও এরা সম্মান দিতে জানেন না। আমি দুঃখিত।
শুক্রবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ৮ দশক আগে শান্তিনিকেতনে প্রতীচীর নির্মাণ। কিছু অনুপ্রবেশকারী আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। আমি এতে ব্যথিত। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমি আপনার পাশে আছি। অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আপনি আমাকে নিজের বোন এবং বন্ধু হিসেবে ধরবেন।
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে বিজেপি-ও। দিলীপ ঘোষ বলেন, বিশ্বভারতীর জমি মাফিয়াদের হাতে চলে যাচ্ছে। সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ভুল?
এদিকে, বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির তরজার আঁচ এখনও সপ্তমে।
বৃহস্পতিবারের ভাষণে নরেন্দ্র মোদি কখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে গুজরাতের সম্পর্ক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায়শই গুজরাত যেতেন। ওখানে বেশ লম্বা সময় কাটিয়েছেন। আহমেদাবাদে থাকাকালীন ‘বন্দি ও অমর ’ ও ‘নীরব রজনী দেখো’ লিখেছিলেন।
আবার কখনও প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্র-ভাবনার সঙ্গে আত্মনির্ভর ভারত এবং ভোকাল ফর লোকাল স্লোগান জুড়ে দেন। বলেছেন, যখন আমরা আত্মনির্ভরতার কথা বলি, যখন আত্মবিশ্বাসের কথা বলি, মহামারির জন্য মেলায় যে সব শিল্পী আসতেন, তাঁরা আসতে পারেননি, এই মহামারি আমাদের শিখিয়েছে, ভোকাল ফর লোকাল, বিশ্বভারতীর কথা বলতে গেলে এখানে ঐতিহাসিক পৌষমেলা হতে পারেনি, আমাদের নতুন লক্ষ্য তৈরি করতে হবে, সেই যাত্রায় আমাদের পাথেয় হবে গুরুদেবেরই ভাবনা।
তৃণমূলের কটাক্ষ, বিধানসভা ভোটের আগে বাঙালির মন জয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ব্যবহার করছে বিজেপি। সৌগত রায় বলেন, বিজেপি-র তো কোনও আইকন নেই। কারন ওরা তো ফ্রিডম স্ট্রাগলে অংশ নেয়নি। জনসঙ্ঘ, আরএসএস কেউ না। ওরা শ্যামাপ্রসাদের নাম নেন। উনিও জেলে যাননি। সাভারকার মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিলেন। তারা আজ অরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথের কথা বলছেন।
পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, জনতা পার্টি যে রাজ্যে যায় সেখানকার মানুষ মহাপুরুষদের সম্মান করে। ওরা পেটেন্ট করেছেন নাকি। যারা এতদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ব্যবসা করছিলেন, তাঁদের মনে হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ধান্দা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। এতদিন দোকান চালিয়েছে এখন ভয় পাচ্ছেন কেন। বিজেপি সব মহাপুরুষের কথা বলে। সকলকে যোগ্য সম্মান দেয়। প্যাটেলের মূর্তি করেছে। আমি যদি প্রশ্ন করি আপনারা মহাপুরুষদের মূর্তি করেননি কেন।
উত্তরে সৌগত রায়ের কটাক্ষ, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ব্যবসা ওরাই ভাবতে পারে। সৌগত বলেন, রবীন্দ্রনাথ নিয়ে দিলীপ কিছু বলেছেন, এটাই আশ্চর্যের। ওনার স্কুলিং তো আরএসএস-এ। আমার মনে হয় না, আরএসএস-এর ক্যাম্পে রবীন্দ্রনাথ শেখানো হয়। ওদের রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছুই জানা নেই। দিলীপবাবুর ন্যূনতম বুদ্ধি থাকলে বুঝতেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ককে যুক্ত করা যায় না। তবে, আমার ধারণা, রবীন্দ্রনাথের পদবি ঠাকুর না হয়ে অম্বানি বা আদানি হলে খুশি হতেন ওরা।
সব মিলিয়ে বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে মনীষীদের নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন ক্রমশ বাড়ছে।