কলকাতা: বানভাসি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। হু হু করে ঢুকছে নদীর জল। গত সপ্তাহের বৃষ্টিপাতের পর জল ছেড়েছে বাঁধগুলি। তার জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশকিছু জেলা। মাটির বাড়ি তো বটেই, পাকা বাড়ির একতলাও জলের নিচে। রাস্তা দিয়ে চলছে নদী। ডিঙি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে স্বস্তির কথা শোনাতে পারেনি আবহাওয়া দফতর।
বুধবার, সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। জল-যন্ত্রণার মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে ফের উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্তের সঙ্গে সক্রিয় হয়েছে মৌসুমী অক্ষরেখা। জোড়া ফলার প্রভাবে বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজ্যজুড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টি হয়েছে। বর্ষণ চলছে উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার - পাঁচ জেলাতেই বৃষ্টি চলছে। দক্ষিণবঙ্গে আরও বৃষ্টি হলে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত জেলাগুলি আরও অসুবিধের মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশি বৃষ্টি হতে পারে উপকূলবর্তী তিন জেলা, দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলাতেও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে।
এখনও জলযন্ত্রণায় ভুগছে বঙ্গবাসী। বুধবার আকাশপথে রাজ্যের তিনটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। হেলিকপ্টারে চড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার পর খানাকুলের ঘোষপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। এরপর দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খানাকুল থেকে ঘাটালে পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এছাড়া, আকাশপথে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরেও বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বানভাসি ঘাটাল মহকুমা। পাশাপাশি, ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত খানাকুল ও উদয়নারায়ণপুর।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঘাটাল শহরে জল নামেনি। চরম ভোগান্তি বাসিন্দাদের। নৌকায় করে যাতায়াত করছেন অনেকে। ট্রাক্টরের ওপর কেউ কেউ পরিবার নিয়ে রয়েছেন। উঁচু রাস্তার ওপর ত্রিপল খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট।
এরইমধ্যে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ার পর বন্যা পরিস্থিতি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতায়। উদয়নারায়ণপুরের ৮৫টি গ্রাম জলমগ্ন। আমতার ২ নম্বর ব্লকের বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। আমতা ১ নম্বর ব্লকের রসপুর এলাকাতেও জল ঢুকছে। দামোদর আর রূপনারায়ণের জল ঢুকেই এই বিপত্তি। হাওড়া-হুগলি সংগোযগাকীর রাজ্য সড়ক এখন জলের তলায়। উদয়নারায়ণপুরে খোলা হয়েছে ৩৫টি ত্রাণশিবির।
হুগলির খানাকুলে বেশ কিছু জায়গায় আজ জল আরও বেড়েছে। কিছু জায়গায় রাস্তা জলের তলায় চলে যাওয়ায় যাতায়াতে বিঘ্ন। ৬০ থেকে ৬৫টি গ্রাম পুরোপুরি জলমগ্ন। খানাকুলে খোলা হয়েছে ৮০টি ত্রাণশিবির। উঁচু রাস্তায় ত্রিপল খাটিয়ে রয়েছে অনেক পরিবার। শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না আজ নৌকায় চড়ে খানাকুলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। কথা বলেন দুর্গতদের সঙ্গে।