গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম: সন্দেহ করা হয়েছিল স্কুলঘরের চাবি চুরি করেছে ওরা। আর স্রেফ সেই সন্দেহের জেরেই প্রায় ২ বছর ধরে এক পরিবারকে সামাজিক বয়কটের নিদান দেওয়া হয়। বসানো হয় সালিশি সভা। সেখানেই মোড়লের নিদানে ওই পরিবারকে গ্রামের কল, পুকুর, দোকান ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনকী গ্রামের অন্য কোনও বাসিন্দা যদি ওই পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলে তাহলে ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথাও ঘোষণা করা হয়। বীরভূমের শান্তিনিকেতন থানার বালিপাড়া আদিবাসী গ্রামের ঘটনা। 


কবিগুরুর স্বপ্নের শান্তিনিকেতনেই বালিপাড়া আদিবাসী গ্রাম। আর সেখানেই এমন বর্বরতার নজির। ১৬০ পরিবারের বসবাস ওই গ্রামে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে গ্রামের এক পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্কুলঘরের চাবি চুরি করার সন্দেহ তুলে সালিশি সভা বসানো হয়। ওই পরিবারের অভিযোগ, সভায় মোড়ল সুনীস হাঁসদা ওরফে রোহিত হাঁসদা সাত জন সদস্যের ওই পরিবারকে একঘরে করার নিদান দেন। এমনকী ওই পরিবারের মহিলা সদস্যা কালীদাসি চোরেকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। সভায় এও নিদান দেওয়া হয় ওই পরিবারের কারও সঙ্গে কেউ কথা বললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে এবং তাদেরও সামাজিক বয়কট করা হবে। এর ফলে প্রায় ২ বছর ধরে ওই পরিবারের কারও সঙ্গে গ্রামের কেউ কথা বলে না। এখানেই শেষ নয়। ওই পরিবার গ্রামের নলকূপ, পুকুর ব্যবহার করতে পারে না, গ্রামের কোনও দোকান থেকে জিনিসপত্রও কিনতে পারে না।


এই মর্মে গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর জেলা পুলিশ সুপার সহ বোলপুর মহকুমা শাসক ও শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কালীদাসি চোরে। তাঁর কথায়, 'নির্মমভাবে আমাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আমাকে ও আমার বাবাকে মারধর করা হয়েছে। মোড়লের নির্দেশে গ্রামের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। ২ বছর ধরে সব জায়গায় জানিয়ে কাজ না হওয়ায় আবার এসপি স্যারকে জানালাম।' ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন গ্রামের মোড়ল সুনীল হাঁসদা। তিনি বলেন, 'এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। গ্রামের সবাই একসঙ্গে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তাতে সায় দিয়েছি।' থানার ওসি ওই গ্রামে গিয়ে কথা বলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।