রঞ্জিৎ হালদার, দক্ষিণ ২৪ পরগণা : করোনা মহামারীর প্রকোপ থেকে মানব সমাজকে বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ গোসাবার বিএমওএইচের। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিনামূল্যে দিচ্ছেন টেলিমেডিসিন পরিষেবা। তবে শর্তও আছে। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে প্লাজমা দান করতে হবে। সঙ্কটকালে আদর্শে আর কর্তব্যে তিনি যেন সেলুলয়েডের অগ্নীশ্বর।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা চিকিত্সক ইন্দ্রনীল বর্গী। সারাদিন ধরে তার মুঠোফোন বেজেই চলেছে। আর তাতেই করোনা আক্রান্ত রোগী ও তাঁদের পরিবারকে টেলিমেডিসিন পরিষেবা দিচ্ছেন তিনি। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। প্যাডে প্রেসক্রিপশন করে তা হোয়াটসঅ্যাপ করে দিচ্ছেন রোগীর পরিবারকে। গোসাবার বিএমওএইচ ইন্দ্রনীল বর্গী বলেছেন, 'কোভিড একটা যুদ্ধ। কতক্ষণ বাড়িতে থাকবেন। কখন হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে। কী ওষুধ খেতে হবে। এসব অনেকে জানতে চান। যতটা পারি বলার চেষ্টা করছি।'
বিনামূল্যে হলেও, এই চিকিৎসা পরিষেবায় করোনা রোগী ও তাঁদের পরিবারের কাছে একটা শর্ত রাখছেন সঙ্কটকালের গুড সামারিটান। কী সেই শর্ত? করোনা থেকে সুস্থ হলে রোগীকে প্লাজমা দান করতে হবে সরকারি প্লাজমা ব্যাঙ্কে। অথবা রোগীর পরিবারের কাউকে রক্তদান করতে হবে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে। যা নিয়ে ইন্দ্রনীল বর্গীর সংযোজন, 'বিনিময়ে আমি যেটা চাইছি , তাঁরা যখন সুস্থ হয়ে উঠবেন, তাঁরা প্লাজমা দেবেন অথবা তাঁর পরিবারের কেউ রক্ত দিয়ে সাহায্য করবেন।'
সম্প্রতি নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখনও হোম আইসোলেশনেই রয়েছেন তরুণ এই চিকিৎসক। ফ্রি টেলি মেডিসিন পরিষেবায় তাঁকে সাহায্য করছেন স্ত্রীও। ইন্দ্রনীল বর্গীর স্ত্রী পল্লবী বর্গী বলেছেন, 'আমাদের যাঁরা ফোন করছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলছি'। বারুইপুরের সাউথ গড়িয়ায় পশ্চিম পাড়ার এই বাড়িতে এভাবেই চলছে সর্বজনের মঙ্গল সাধনের কর্মযজ্ঞ। ইন্দ্রনীলবাবুর উদ্যোগে সাড়া দিয়েছেন এলাকার তরুণরা। নিকটবর্তী এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও মেডিক্যাল সাপোর্ট পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।
রাজ্যজুড়ে রোজ ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনা-চিত্র। চিন্তা বাড়াচ্ছে হাসপাতালের বেড, অক্সিজেনের অভাব। সঙ্গে ক্রমশ যেন একাধিক জায়গায় উধাও হয়ে যাচ্ছে মানবিকতা। কোথাও করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধা মা-কে ফেলে পালিয়েছেন ছেলে-বউমা-মেয়ে। কোথাও, এক সপ্তাহ কার্যত বাড়িতে একা পড়ে থেকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার। আবার কোথাও করোনা আক্রান্ত আশঙ্কায় অশীতিপর বৃদ্ধাকে তাজপুরের সমুদ্র সৈকতে বসিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাতির বিরুদ্ধে। করোনাকালে চারিদিকে যখন অমানবিকতার এই ছবি, তখন আশার আলো জাগিয়ে রাখেন অনেকেই, যাঁরা হাঁটেন স্রোতের বিপরীতে। তেমনই একজন চিকিৎসক ইন্দ্রনীল বর্গী। তাদের লড়াইয়ে এভাবেই মহামারীর বিরুদ্ধে এভাবেই রুখে দাঁড়াচ্ছে মানবতা।