পানাগড়: এক অভিনব উদ্যোগে জীবন্ত কিংবদন্তি অর্জন সিংহের নামে বর্ধমানের পানাগড় বায়ুঘাঁটির নাম বদলে এয়ার ফোর্স স্টেশন অর্জন সিংহ করল ভারতীয় বায়ুসেনা। এক ছিমছাম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই নাম পরিবর্তনের পালা সারা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বায়ুসেনার ইস্টার এয়ার কম্যান্ডের প্রধান (এওসি-ইন-সি, ইএসি) এয়ার মার্শাল সি হরি কুমার। এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম এবং একমাত্র মার্শাল অফ দ্য ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স (এমআইএএফ) তথা অবসরপ্রাপ্ত বায়ুসেনা প্রধানের ৯৭ তম জন্মদিনে এই কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হল।

ঠিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের ১৫ এপ্রিল লায়লপুরে জন্মগ্রহণ করেন অর্জন সিংহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ সালে পানাগড়ের বায়ুঘাঁটি নির্মাণ করেছিল মার্কিন বায়ুয়েনা। তাদের লক্ষ্য ছিল, টিন-বর্মা-ভারত সীমান্তের ওপর নজর রাখা। এই সময়ে এক নম্বর স্কোয়াড্রনের কম্যান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব নেন স্কোয়াড্রন লিডার অর্জন সিংহ। পানাগড় থেকে তাঁর নেতৃত্বাধীন ‘টাইগার’ স্কোয়াড্রন ইম্ফলে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় থাকা জাপানি বাহিনীর ওপর ভারী বোমাবর্ষণ করে তাদের রুখে দেয়।

তাঁর বীরত্ব এবং দুর্ধর্ষ সাহসিকতাকে মাথায় রেখে অর্জন সিংহকে নিজের হাতে ডিস্টিংগুইশড ফ্লাইং ক্রস (ডিএফসি) পদক পরিয়ে দিয়েছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। স্বাধীনতাত্তোর ভারতে ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও বড় ভূমিকা নিয়েছিল পানাগড়। অর্জন সিংহ ১৯৬৪-৬৯ পর্যন্ত বায়ুসেনার প্রধান ছিলেন। এর মধ্যেই ’৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধজয়ে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৬৬ সালে প্রথম প্রধান হিসেবে তাঁকে এয়ার চিফ মার্শানের পদমর্যাদা দেওয়া হয়।



দেশের জন্য তাঁর আজীবন সেবার জন্য ভারত সরকার ২০০২ সালের ২৮ জানুয়ারি অর্জন সিংহকে মার্শাল অফ দ্য ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স (এমআইএএফ) হিসেবে ভূষিত করে। বস্তুত, তিনিই দেশের প্রথম (এখনও পর্যন্ত একমাত্রও বটে) বায়ুসেনা প্রধান যাঁকে অবসরের পর এই সাম্মানিক (ফাইভ স্টার জেনারেল) পদ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তিনি স্থলসেনার ফিল্ড মার্শাল মানেকশ এবং ফিল্ড মার্শাল কারিয়াপ্পার সমতূল্য হন।

অবসরের পরও তিনি বাহিনীর জন্য বিভিন্ন সেবামূলক এবং উন্নয়নমূলক কাজে জড়িত রেখেছেন।  ২০০৪ সালে তিনি বায়ুসেনা অফিসার এবং তাঁদের পরিবারের সহায়তার জন্য একটি স্বাধীন ট্রাস্ট খোলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। এখানে তিনি নিজের গাঁটের থেকে ২ কোটি টাকা অনুদানও দেন। ট্রাস্টের পরিচালনের দায়িত্বে রয়েছে বায়ুসেনার সংগঠন।

আজও, অর্জন সিংহ বায়ুসেনার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বাহিনীকে উজ্জীবিত করেন। তাঁর নম্রতা, বড় মাপের মন, মহানুভবতা এবং বাহিনীর সকলের জন্য তাঁর ভাবনা – এসবের জন্য আজ বায়ুসেনায় অর্জন সিংহ হলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি।