সোমনাথ দাস, ঘাটাল: ১২ বছর বয়সের একটি  মেয়ের দাবিদার দুই মা।  দুই মায়ের হাতেই রয়েছে সন্তানের বৈধ কাগজপত্র। একজন গর্ভধারিনী মা আর একজন পালিতা মা। পালিতা মায়ের কাছে আছে আধার কার্ড রেশন কার্ড এবং স্কুলের সার্টিফিকেট। মেয়ের নাম পিউ দোলুই। গর্ভধারিণী মায়ের হাতে রয়েছে জন্ম সার্টিফিকেট। সেখানে মেয়ের নাম রানী সামন্ত। 


দুই মায়ের টানাটানিতে ১২ বছরের ছোট্ট মেয়েটিকে  মায়ের কোল ছেড়ে এখন মেদিনীপুরের সরকারি হোমে থাকতে হচ্ছে।  গর্ভধারিণী মায়ের বাড়ি ঘাটালে খড়ার গ্রামে। আর পালিত মায়ের বাড়ি ঘাটালের আজবনগরের বাদপাড়া পাকাপোলে। 


এই টানাপোড়েনের সূত্রপাত হয়েছিল প্রায় ছয় মাস আগে। ১২ বছর আগে সদ্যোজাত এক শিশুকে রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন দেবু দোলুই ও ছবি দোলুই। দেবু বাবু পেশায় কাঠ মিলের কর্মী। অভাবের সংসারে নিজের সন্তান থাকার পরেও এই বাচ্চা মেয়েটিকে কুড়িয়ে পেয়ে দোলুই দম্পতি তাকে নিজের নিজের সন্তানের মতো করেইমানুষ করেন। নিজের ছেলেকে সোনার কাজে বাইরে পাঠালেও পিউকে স্কুলে ভর্তি করান। পিউ এখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। 


গর্ভধারিনী মা ইতিরানি সামন্ত মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলেই এতদিন তার মেয়ের কোনো খোঁজ করেননি। তবে তিনি বর্তমানে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন এবং খোঁজ নিয়ে জানতে  পেরেছেন ঘাটালের অশোকনগরের তার মেয়ে লালিত-পালিত হচ্ছে।এরপর ইতি সামন্ত আইনের দ্বারস্থ হন এবং তার মেয়েকে ফেরত পেতে পুলিশের কাছে  সমস্ত বিষয়টি জানান। 


আইনের গেরোয় পড়ে শিশুটিকে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে হোমে থাকতে হচ্ছে। তবে ঘাটাল চাইল্ড লাইনের প্রদীপ শাসমল জানিয়েছেন, দুই মা আলোচনা করে যদি ঠিক করেন যে মেয়ে কার কাছে থাকবে তাহলে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হোম কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করবে। তবে জন্মের পর থেকেই বাচ্চা মেয়েটির তার পালিত মা-বাবাকেই চেনে পিউ। গর্ভধারিনী মাকে সে চিনতে পারছে না এবং তার কাছে যেতেও চাইছে না। 


সরকারি হোমে মেয়ের কষ্টে মন গলেছে গর্ভধারিণী মায়ের।  ইতিরানি সামন্ত জানিয়েছেন, যেহেতু মেয়েটি হোমে রয়েছে। সেখানে কষ্ট পাচ্ছে। তাই আমি চাই মেয়েটি ওর পালিতা মায়ের কাছেই ফিরে আসুক। তবে আমি মেয়েকে দেখতে চাইলে আমাকে যেন দেখতে দেয়।