পশ্চিম মেদিনীপুর: সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে, প্রায় প্রতিটিতেই দেখা গিয়েছে, বিরোধী রাজনীতির পরিসর দখলে একটু একটু করে এগোচ্ছে বিজেপি। সেই ধারা অব্যাহত রইল সবংয়েও!
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সবংয়ে বিজেপি ২.৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিল। এবারের উপনির্বাচনে সেটাই এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ! অর্থাৎ, এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ ভোট বাড়াতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি! আর এই সাফল্যই সবংয়ে বিজেপিকে তুলে এনেছে তিন নম্বরে। দু’নম্বরে থাকা সিপিএমের ঘাড়ের ওপর কার্যত নিঃশ্বাস ফেলছে তারা!
সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট ৪১ হাজার ৯৮৯। আর বিজেপির ৩৭ হাজার ৪৮৩। যদিও গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে এই সবংয়েই বিজেপির ঝুলিতে এসেছিল মাত্র ৫ হাজার ৬১০টি ভোট!
এপ্রসঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূলের ১ লাখ ২৬ ভোট ছিল। মানস তৃণমূলের কাঁধে চেপে ভোট হল ১ লাখ ৬। ২০ হাজার ভোট কমেছে। আমাদের ৩২ হাজার ভোট বাড়ল। ভোট কমল সিপিএম, কংগ্রেসের। বাড়ল কার বিজেপির।
তৃণমূল অবশ্য বিজেপির ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিরোধীরা কে কোথায় গেল বড় কথা নয়, উন্নয়নে কে কোথায় ঝাঁপাল সেটাই আসল। সেদিকেই দৃষ্টি। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বড় কথা নয়। বাংলার উন্নয়নই আসল।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সবংয়ে বাম-কংগ্রেস প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার আলাদা লড়ে বামেরা পেয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। কংগ্রেস প্রায় ৯ শতাংশ। অর্থাত, বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট প্রায় ৩০ শতাংশ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাম-কংগ্রেসের ভোটারদের একটা বড় অংশ চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে। বাকিটা পেয়েছে তৃণমূল। ২০১৪ সালে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৭ শতাংশ ভোট। গত বছর উপনির্বাচনে সেটাই বেড়ে হয়েছিল প্রায় ১৬ শতাংশ! এমনকি এই ফলের নিরিখে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে!
২০১৪ সালে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট। ২০১৬ সালের উপনির্বাচনে সেটাই বেড়ে হয় প্রায় ২৯ শতাংশ! কোচবিহারে বামেদের পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, দক্ষিণ কাঁথিতে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৯ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালের উপনির্বাচনে ভোট শতাংশ প্রায় ৩১ শতাংশে নিয়ে যায় বিজেপি! একেবারে দ্বিতীয় স্থানে! ২০১৬ সালে মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৮ শতাংশ ভোট। ৬ মাস পরে উপনির্বাচনে সেটাই বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮.৫ শতাংশ।
সবং যেমন তৃণমূলের কাছে এবার ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ ছিল, তেমনই মর্যাদার লড়াই ছিল বিজেপির কাছেও। মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়ার পর এটাই ছিল বড় কোনও নির্বাচন। প্রচারের পাশাপাশি, ভোটের তিনদিন আগে থেকে সবংয়ে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের একসময়ের ভোট ম্যানেজার!
কিন্তু তার পরেও, ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সবংয়ে জিতল রাজ্যের শাসক দল।
বিজেপি আবার পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে। পাল্টা সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুতে বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সাম্প্রতিক ভোটগুলি থেকে একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট, আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজেপির উঠে আসার সম্ভাবনা প্রবল।