কলকাতা: দলের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছিল। একইসঙ্গে জল্পনাও। শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে গত কয়েকদিনরে ঘটনাবলি লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হবে যে, দলের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে নিয়ে ক্রমশই অস্বস্তি বাড়ছিল তৃণমূলের অন্দরে।


এদিন বেলা ১২টা নাগাদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ই-মেলে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে নিজের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন শুভেন্দু। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি জানিয়েছেন, বিতর্কের জেরেই মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করছেন।


তাঁর এই সিদ্ধান্ত যে আসতে পারে, তার আঁচ ক্রমশ জোরদার হচ্ছিল। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের আগে এদিন সকালে হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান থেকেও পদত্যাগ করেন শুভেন্দু।


পাশাপাশি, রাজ্য থেকে প্রাপ্ত সরকারি নিরাপত্তা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পরিবহণমন্ত্রী। প্রায় জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেতেন শুভেন্দু। নিজের পাইলট কার ও এসকর্ট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পরিবহণমন্ত্রী।


এর আগে, গতকালই হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। সেই জায়গায় নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।


সংগঠনের শীর্ষ পদাধিকারীদের একাংশের কাজকর্মে শুভেন্দু অধিকারী যে ক্ষুব্ধ, তা আর গোপন নেই। বেশ কিছুদিন ধরেই শুভেন্দু বনাম তৃণমূলের "ঠান্ডা লড়াই" চলছিলই। দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।


তৃণমূল নেতার বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যেও স্পষ্ট ফুটে উঠছিল অসন্তোষের কথা। কখনও তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, "প্যারাস্যুটেও নামিনি, লিফটেও উঠিনি। সিঁড়ি ভেঙে ধাপে ধাপে এখানে এসে পৌঁছেছি।" কখনও বলেছেন, "আমার পরিবারের সম্পর্কে বাজে কথা বলা হলে, মানুষ শুনবে না। " আবার কখনও বলেছেন, "নন্দীগ্রামের সভা নতুন নয়, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কারোর একার নয়, ভোটের আগে এলে, ভোটের পরেও আসতে হয়।"


সূত্রের খবর, বরফ গলাতে বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় ২ দফায় শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করলেও বেরোয়নি রফাসূত্র। তারমধ্যে গত পরশু, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ সিরাজ খান। বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, শুভেন্দু অধিকারীর জন্যও দরজা খোলা।


ঠিক তার আগের দিন, অর্থাৎ ২৪ তারিখ শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ আরও দুই নেতার নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে রাজ্য প্রশাসন। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি ও তাঁর ছেলের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে প্রশাসন।


পুরুলিয়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো ও তাঁর ছেলে তথা বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য সুদীপ মাহাতোর নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেয় রাজ্য সরকার।


তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সাম্প্রতিক কোনও সভা-সম্মেলনে তৃণমূলের প্রতীক, ব্যানার, ফেস্টুন কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না! তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনার স্রোত প্রতিদিনই বাড়ছিল। জেলায় জেলায় দাদার অনুগামী নামে নানা ধরণের পোস্টারেরও সংখ্যাও বেড়ে চলছিল।


এমনকী, এদিন সকালে দার্জিলিঙের চকবাজার ও কার্শিয়ঙে শুভেন্দুর ছবি সহ আমরা দাদার অনুগামী লেখা পোস্টার দেখা যায়। এর আগে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় শুভেন্দুর অনুগামীদের পোস্টার দেখা যায়।


শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ‘আপাতত সাধারণ বিধায়ক হিসেবে শুভেন্দু থাকছেন। উনি যখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন বিধায়ক পদ ছাড়বেন।’