গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বোলপুর: করোনা আবহে ভিনরাজ্যে প্রথমে মা, তারপর বাবাকে হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে দুই ভাই-বোন। বীরভূমে আত্মীয়র বাড়িতে ঠাঁই হয় তাদের। কিন্তু সেখানে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই ঘটনার কথা জানতে পেরে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবিপি আনন্দের প্রতিনিধিরা। পাড়ুই থানার ওসি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে ওই দুই ভাই-বোনকে সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাদের ওষুধপত্র কিনে দেওয়া হয়। বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় ওই পরিবারের কাছ থেকে শিশুদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি ওই দু’টি শিশুর ভবিষ্যৎ যাতে সুরক্ষিত হয়, তাদের থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয়, সেটা দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাদের পাশে থেকে সবরকম সাহায্য করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেলাশাসক।
ওই পরিবার সূত্রে খবর, বোলপুরের বাসিন্দা রঞ্জিৎ সাউ বিয়ে করেন সাঁইথিয়ার বাসিন্দা দুলি দাসকে। তাঁরা পেশাগত কারণে দিল্লিতে চলে যান। সেখানে তাঁরা একটি হোটেলে রান্নার কাজ করতেন। সেখানে তাঁদের দুই সন্তানের জন্ম হয়। মেয়েটির বয়স চার বছর এবং ছেলের বয়স সাত বছর। ২০১৯-এ অজানা জ্বরে মৃত্যু হয় দুলি দাসের। তারপর থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে দিল্লিতে একাই ছিলেন রঞ্জিৎ। কিন্তু করোনা আবহে প্রায় দু’বছর ধরে কর্মহীন ছিলেন রঞ্জিৎ। কোনওরকমে দিন কাটছিল তাঁর। ৬ মাস আগে তিনি করোনা আক্রান্ত হন। দিল্লিতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর বাবা-মাকে হারানো অসহায় দুই শিশু অথৈ জলে পড়ে।
দিল্লি থেকে বীরভূমের বাড়িতে রঞ্জিতের মৃত্যুর খবর আসার পর শিশু দু’টির দিদিমা দিল্লি গিয়ে তাদের নিয়ে আসেন। এরপর ওই দু’টি শিশু তাদের কাকার বাড়িতে ছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই সেখান থেকে তাদের দিদিমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তাদের বেশিদিন ঠাঁই হয়নি। দিদিমা অসুস্থ, তাছাড়া তাঁর বাড়িতে অনটন। সেই কারণে তাদের সেখান থেকে নিয়ে যান মেসোমশাই। কিন্তু তিনি পেশায় দিনমজুর। তাঁর সংসারেও অভাব রয়েছে। ফলে শিশু দু’টিকে নিয়ে তিনিও সঙ্কটে পড়েন। তাদের যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে এবিপি আনন্দের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকরা এই শিশু দু’টির পাশে দাঁড়ানোয় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে পরিবারটি। তাঁদের আশা, সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো শিশু দু’টির ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হবে। তাদের আর অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাতে হবে না।
কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন, করোনা আবহে যে শিশুরা বাবা-মাকে হারিয়েছে, তাদের পাশে থাকবে সরকার। বীরভূমের এই পরিবারটি অবশ্য এই প্রকল্পের বিষয়ে কিছু জানে না। এতদিন কেউ তাদের সাহায্য করেনি। এবার অবশ্য সরকারি সাহায্যের আশায় পরিবার।