পার্থ প্রতিম ঘোষ, কলকাতা: করোনার কারণে অর্থনৈতিকভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এবারের বাজেটে সেই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার দিশা থাকবে বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। প্রত্যাশা পূরণ হল কী?
লালপাড় শাড়িতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মুখে রবীন্দ্রনাথের লেখা লাইন। বাজেটে বাংলার জন্য বরাদ্দ সড়ক উন্নয়ন ৷ ভোটের কথা মাথায় রেখেই কি বাজেটে বাংলার ছোঁয়া? বাজেট ঘিরে প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু, আসল প্রশ্ন হল, করোনা বিধ্বস্ত সাধারণ মানুষ বাজেট থেকে কী পেল?
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের কথায়, ‘‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে এই বাজেট তৈরি হয়েছে, অনেক রাজ্যই পর্যুদস্ত, অনেকের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, প্রিয়জনকে হারিয়েছেন অনেকে, বহু মানুষ বাড়িতে বসেছিলেন ৷’’
করোনা-লকডাউনের ধাক্কায় টলে গেছে দেশের অর্থনীতি। লক্ষ লক্ষ কর্মহীন। তাঁদেরই একজন নরেন্দ্রপুরের বাপ্পা মজুমদার। কাজ করতেন ট্যাংরার একটি চর্মজাত সামগ্রীর কারখানায়। লকডাউনে কাজ গেছে। স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন বাপ্পা। অনেক চেষ্টা করেও চাকরি পাননি। উপার্জন বন্ধ। জমানো টাকাও ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। এবারের বাজেট তাঁর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল কি? বাপ্পার কথায়, সোনা-রুপোর দাম কমেছে, সেটা তো খেতে পারব না, শ্রমিকদের জন্য কিছু নেই এই বাজেটে, যেখানেই ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি, বলছে অত বেতন দিতে পারব না ৷’’
করোনার পর ওষুধের খরচ চরমে পৌঁছেছে। কিন্তু, আয় বেড়েছে কোথায়? মৃদুলা ভট্টাচার্য, পেশায় শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, ‘‘এবছরটা অন্য বছরের তুলনায় আলাদা, বাড়ির ৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল, জীবন বিমার জন্যও যদি কিছু করত, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমল না, বাজেটের লাভের লাভ কিছুই হল না ৷’’
লকডাউনের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অনেকেই কর ছাড়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু আশা করছিলেন। কিন্তু সেই আশা অপূর্ণই থেকে গেছে বলে জানিয়েছেন ৷ কলকাতার এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার দীপকুমার দে-র কথায় ‘‘আমাদের ইনকাম অর্ধেক হয়ে গেছে, প্রতিটা বাজেটে আমরা প্রত্যাশা করি ট্যাক্স বেনিফিট পাব, এবার কিছুই পেলাম না...৷’’
করোনা মহামারির জেরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া জীবন ফের কবে ফিরবে স্বাভাবিক ছন্দে? বাপ্পা-মৃদুলার মতো কোটি কোটি সাধারণ মানুষের এটাই প্রশ্ন।