কলকাতা: কেরল, পঞ্জাব ও রাজস্থানের পর দেশের চতুর্থ রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গৃহীত হল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-বিরোধী প্রস্তাব।   রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ দুপুর দুটো নাগাদ সিএএ-বিরোধী প্রস্তাব বিধানসভায় পেশ করেন। সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব পাসের জন্য বিরোধীদের কাছে আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
প্রস্তাবে কিছু সংশোধনী আনতে চান কংগ্রেস ও বাম বিধায়করা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সংশোধনী না আনার আর্জি জানানো হয়।
শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে গেল না কংগ্রেস-বাম। বিরোধিতা করে বিজেপি। প্রস্তাব বিধানসভায় গৃহীত হয়।
বিরোধীরা এ ব্যাপারে এর আগে তাদের আনা প্রস্তাবে কেন সায় দেওয়া হল না, মুখ্যমন্ত্রী কেন রাজভবনে গেলেন, সেই সব প্রশ্ন তোলেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতা ও বিদ্বেষের বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়েছে। যারা দেশের বিভাজন ঘটাতে চাইছে, তাদের সমর্থন করতে পারি না'।

বিরোধী বাম ও কংগ্রেস সদস্যদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূরে সরাতে এবং কেন্দ্রের ‘ফ্যাসীবাদী বিজেপি সরকারের’ বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের আবেদন জানান তিনি।

এনপিআর, এনআরসি ও সিএএ-একসূত্রে বাঁধা বলে উল্লেখ করা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন নাগরিকত্ব আইন ‘জন-বিরোধী’।

সিএএ বিরোধী প্রস্তাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে মমতা এই বিতর্কিত আইন অবিলম্বে খারিজের দাবি জানান।  তিনি বলেন, 'সিএএ জন-বিরোধী, সংবিধান-বিরোধী..আমরা চাই, এই আইন অবিলম্বে খারিজ করা হোক'।

তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বামদলগুলির অপপ্রচার বন্ধ করা উচিত বলেও মমতা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশকে বাঁচাতে সংকীর্ণ মতপার্থক্য ভোলা এবং দেশকে বাঁচাতে একযোগে লড়াইয়ের সময় এসেছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য সফরের সময় তাঁর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে কংগ্রেস ও সিপিএমের সমালোচনার উল্লেখ করে মমতা বলেন, 'দিদি-মোদি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, এই স্লোগান বিরোধী দলগুলির কাছে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরবে'।

মমতা বলেন, 'আমাদের সরকার দিল্লিতে এনপিআর নিয়ে বৈঠকে যোগ না দেওয়ার হিম্মত রাখে। বিজেপি চাইলে  সরকার ভেঙে দিতে পারে'।
এদিনের প্রস্তাবে সিএএ বাতিল, জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) ও জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জী (এনপিআর) প্রকল্পের কাজ শুরু না করার আর্জি জানানো হয়েছে কেন্দ্র সরকারকে। কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন যে, কেন্দ্র শুধুমাত্র অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সিএএ চালু করার চেষ্টা করছে। মমতা আরও বলেছিলেন, আমরা তিনমাস আগে এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করেছি। এবার সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করব।
এভাবে বিভিন্ন রাজ্যগুলির বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাসের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনও রাজ্যই সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করতে পারে না এবং তা অসাংবিধানিক পদক্ষেপ।
বিজেপি ও তৃণমূলের লড়াইয়ে এখন প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে সিএএ ও এনআরসি। তৃণমূল এর বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে, সিএএ-র সমর্থনে পথে নেমেছে বিজেপি।
গত ডিসেম্বরে সংসদে সিএএ অনুমোদিত হয়েছিল। এরপর থেকেই এই আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সভা-সমাবেশ করছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন ঘটানোই এই আইনের উদ্দেশ্য।