উত্তর দিনাজপুর: মঞ্চে তখন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তৃতা শেষ পর্যায়ে। হঠাৎই মঞ্চে উঠে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন এক মহিলা! রীতিমতো হকচকিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী! পুলিশ এসে কোনও ক্রমে সরিয়ে নিয়ে যায় মহিলাকে! ঘটনার নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভিভিআইপি হিসেবে জেড প্লাস নিরাপত্তা পান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সভায় থাকে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। সেই বলয় টপকে কী করে মঞ্চে উঠে এলেন মহিলা? ঘটনায় বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা!

‍পুলিশ সূত্রে খবর, রাবেয়া ও আমেরা খাতুন সম্পর্কে দুই বোন। উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির বাসিন্দা। ২০১৫ সালে জমি বিবাদে খুন হন রাবেয়া ও আমেরার বাবা। রাবেয়াকে চাকরি দেয় সরকার। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়া হয়। রাবেয়ার বিয়ের খরচ মেটানোর দায়িত্বও নিয়েছে প্রশাসন।
তাও কেন এমন কাণ্ড ঘটালেন রাবেয়া? পুলিশ সূত্রে দাবি, গোটাটাই পূর্ব পরিকল্পিত। এর আগে মালদা ও গঙ্গারামপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা মঞ্চে ওঠার টার্গেট করেছিলেন দুই বোন। দু’বারই ব্যর্থ হন তাঁরা।

কিন্তু জেড প্লাস ক্যাটিগরির নিরাপত্তাপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর, নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে মঞ্চে উঠলেন কী করে ওই মহিলা? কোথায় ছিল নজরদারি? রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্তের মতে, সিরিয়াস সিকিওরিটি ল্যাপস। জেড প্লাস সিকিওরিটি ক্যাটিগরিতে পড়েন। প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সমীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নিত? যাঁদের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা। ঘটনার নেপথ্যে কারও মদত রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এই ইস্যুকেই হাতিয়ার করে ময়দানে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। নিরাপত্তায় খামতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে, এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল সরকারকেই দায়ী করেছে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, বিচার চাইতে গেছে। বিচার দেন না মমতা। শুধু পয়সা দিয়ে দিচ্ছে। কটাক্ষ করতে ছাড়েনি সিপিএমও। বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, মমতা এমন ব্যাপার তৈরি করেছে, যে তাঁকে না বললে কাজ হয় না। চাকরি থেকে পরীক্ষায় পাস, সবকিছুর জন্যই মমতার কাছে যেতে হয়।
একদিকে যেমন ঘটনা ঘিরে চড়ছে রাজনীতির পারদ, অন্যদিকে তেমন বিষয়টি যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নবান্ন। সূত্রের খবর, নিরাপত্তায় যে গলদ ছিল, তা মানছেন নবান্নের শীর্ষ কর্তারাও। ইতিমধ্যে দু’টি পর্যায়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি হবে ডিজি পর্যায়ে, আরেকটি হবে ডিরেক্টর অফ সিকিওরিটি পর্যায়ে।