নয়াদিল্লি: মাত্র ১৫ মাসে ১৭১টি এনকাউন্টারের ঘটনা। সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে অসমের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার। হিমন্ত সরকারের পুলিশের বিরুদ্ধে ভুয়ো এনকাউন্টারের অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই। বিষয়টি 'অত্যন্ত গুরুতর' বলে এবার মন্তব্য করল দেশের শীর্ষ আদালতও। এই মামলা একেবারে খারিজ করে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে আদালত। (Assam Police Encounters)
হিমন্তের আমলে অসমে পুলিশি এনকাউন্টারের ঘটনা যেভাবে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং ঊজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে শুনানি চলছিল। ২০২১ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত পর পর ১৭১টি পুলিশি এনকাউন্টার কী করে হল, তা নিয়ে অসম পুলিশের কাছ থেকে বিশদ রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতিরা। (Supreme Court)
এক বছরের কিছু বেশি সময়ে কী করে এত এনকাউন্টার হল, তা নিয়ে এর আগে গুয়াহাটি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে গুয়াহাটি হাইকোর্ট ওই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দেয়। হাইকোর্টের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলাটি শীর্ষ আদালতে ওঠে। মঙ্গলবার আরিফ মহম্মদ ইয়াসিন জোয়াদ্দারের আবেদনের শুনানি চলছিল। শীর্ষ আদালতে তাঁর হয়ে সওয়াল করছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।
সওয়াল-জবাব চলাকালীন শীর্ষ আদালতে প্রশান্ত জানান, পুলিশি এনকাউন্টার নিয়ে তদন্তে ২০১৪ সালে যে নির্দেশিকা জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট, অসম পুলিশ তা মেনে চলেনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং অসমের রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও কর্তব্যপালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন প্রশান্ত। ভুয়ো এনকাউন্টার নিয়ে যে অভিযোগগুলি সামনে এসেছে, আইন মেনে তার তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এতে অসম সরকারের কৌঁসুলি আদালতে জানান, হাইকোর্ট আগেই ওই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছে। মামলাটি 'অপরিণত' বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট। এতে শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা বলেন, "এই ধরনের মামলাতে অপরিণত বলে খারিজ করে দেওয়া যায় না।" জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, "নাগরিকের স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িয়ে যেখানে, সেখানে আপনারা অগ্রভাগে থাকবেন বলেই প্রত্যাশা আদালতের।" ভৌগলিক ভাবে অসমের যে অবস্থান, তাতে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেও মন্তব্য করে শীর্ষ আদালত। ২৬ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টে আবেদনকারী জানিয়েছিলেন, ওই ১৫ মাসে যে ১৭১টি এনকাউন্টার হয়, তার মধ্যে ৮০টির বেশি ভুয়ো এনকাউন্টার বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অনেককে খুন করা হয়েছে, এমন অনেকে আহত হয়েছেন, যাঁরা ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। আদালতের নজরদারিতে, অন্য রাজ্যের পুলিশ, CBI এবং SIT দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন আবেদনকারী। কিন্তু হাইকোর্টে মামলা খারিজ হয়ে যায়। ওই ১৭১টি এনকাউন্টারে ৫৬ জন মারা যান এবং ১৪৫ জন আহত হন বলে জানা গিয়েছে।
এক্ষেত্রে দু'টি ঘটনার কথা বিশেষ ভাবে উঠে এসেছে। চলতি বছরের অগাস্ট মাসে গণধর্ষণে অভিযুক্ত এক যুবক নগাঁওতে নদীতে ডুবে মারা যায়। পুলিশ জানায়, অপরাধস্থলে নিয়ে যাওয়ার সময় পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্ত, পুকুরে ঝাঁপ দেয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আবার দীপজ্যোতি নিয়োগ, মনুজ বুরাগোহাইন এবং বিশ্বনাথ বোরগোহাইন নামের তিনজনকে পুলিশি এনকাউন্টারে মারা যায়। তারা নিষিদ্ধ ULFA-I সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করে পুলিশ। বলা হয়, হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশ আধিকারিকের পিস্তল ছিনিয়ে নেয় তারা। তাতেই এনকাউন্টার করা হয়। কয়েক মাস পর চার পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভুয়ো এনকাউন্টারের FIR দায়ের হয়।